মিয়ানমারের ওপার থেকে থেমে থেমে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। সে শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকা। সীমান্ত লাগোয়া বসবাসকারীরা অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসার ঘটনা অব্যাহত থাকায় স্থানীয় অনেকের নির্ঘুম রাত কাটছে। এমন গোলাগুলির মধ্যেই গত দুইদিন ধরে টেকনাফের নাফ নদের সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কাছে বিশাল একটি জাহাজের দেখা মিলছে। তবে জাহাজটি সম্পর্কে বেশি কিছু তথ্য দিতে পারছেন না কেউ।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, বুধবার (১২ জুন) দুপুরে নাফ নদের টেকনাফ সদরের মৌলভীপাড়ার বিপরীতে মিয়ানমারের কাছে বিশাল জাহাজটির দেখা মেলে। দুপুর থেকে টানা সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা গেছে জাহাজটিকে। অনেকেই দাবি করছেন, এটা মিয়ানমারের নৌবাহিনীর। তবে এর মধ্যেই রাত ৯টা থেকে ওপার থেকে ভেসে আসতে থাকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। যা চলে টানা ৩ ঘণ্টা ধরে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বুধবার রাতভর থেমে থেমে শব্দ শোনা গেছে বিস্ফোরণের শব্দ। এমনকি বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ভোর ৪টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত আবারও থেমে থেমে বিকট ওই শব্দ ভেসে এসেছে। তবে সর্বশেষ দুপুর পর্যন্ত গোলাগুলি ও বিস্ফোরণ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী আরও জানান, বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেলেও বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকালের পরে জাহাজটি দক্ষিণ দিকে সরে যায়। বর্তমানে নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে। সেই জাহাজ থেকে মিয়ানমারের স্থলভাগে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টারশেল বর্ষণের শব্দ অব্যাহত রয়েছে।
সাবরাং ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম জানান, টেকনাফ সীমান্তের পরিস্থিতি গত এক মাস অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। কোনো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। এর মধ্যে গত ৫, ৮ ও ১১ জুন নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারের অংশ থেকে সেন্টমার্টিনগামী নৌযানে গুলিবর্ষণ করা হয়। এরপর ১২ জুন দুপুরে নাফ নদে দেখা মিলল মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ। এরপর রাত থেকে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে।
সীমান্তে বিস্ফোরণের বিকট শব্দের বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জেনেছেন টেকনাফের ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী। তিনি বলেন, “সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টরা সজাগ রয়েছে। তারপরও সীমান্ত পরিস্থিতির ওপর প্রশাসন পর্যবেক্ষণে রয়েছে।”
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, “একটি বড় জাহাজ দেখা ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাওয়ার বিষয়টি অবহিত রয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় সর্তক অবস্থানে রয়েছি।”
প্রসঙ্গত, টেকনাফের নাফ নদের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট থেকে গুলিবর্ষণের সাতদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে নৌযান চালাচল বন্ধ রয়েছে। এমন অবস্থায় বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে পণ্য নেয়া ও সীমিত আকার যাত্রী আসা যাওয়া শুরু করার কথা রয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। তবে এখন পর্যন্ত তা শুরু হয়নি।