২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “এই মামলায় প্রথমে তারেক রহমান সংযুক্ত ছিলেন না। পরে মুফতি হান্নানকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে তার জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে তারেক রহমানকে যুক্ত করা হয়। এমনকি মুফতি হান্নান এই জবানবন্দির বিরুদ্ধে এফিডেভিট দিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার করেন। পরবর্তী সময়ে মুফতি হান্নানকে অন্য একটি মামলায় ফাঁসি দিয়ে তড়িঘড়ি করে রায় কার্যকর করা হয়, যাতে তিনি এই মামলায় পরবর্তীকালে আর কোর্টে আসার কোনো সুযোগ না পান।”
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারেক রহমানের নাম এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “সুষ্ঠু তদন্ত না করেই তড়িঘড়ি করে মামলা শেষ করা হয়েছে। আমরা বারবার বলে এসেছি এই মামলায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। এ ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি জঘন্য ঘটনা। তারেক রহমানসহ বিএনপির কোনো নেতা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।”
কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ভারত সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “যারা জনগণের কাছে যেতে পারে না তারাই এভাবে ফায়দা নিতে চায়। আমরা চাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জনগণ ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করবেন এমন একটি নির্বাচন।”
ফখরুল আরও বলেন, “আগামী নির্বাচনে বিরোধী দলের মাঠ শূন্য করতে আবারও চক্রান্ত চলছে। একই কায়দায় গত পরশু দিন রাতে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন। গত শনিবার হবিগঞ্জে সাবেক মেয়র জি কে গউছের বাড়িতে গুলি করা হয়। তিন শতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রোববার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও গুলি করেন। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে বিরোধী দলশূন্য নির্বাচন করতে চায়।”
তিনি বলেন, এখন শুরু হয়েছে মেগা প্রকল্প চালু করা। কার জন্য? কিসের জন্য? এগুলোর লক্ষ্য হলো তাদের পকেট ভরানো। এগুলো তো জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সুতরাং এখানে তো বলার কিছু নেই যে আপনি উন্নয়ন করেছেন! আজকে জাতি এদের হাত থেকে মুক্তি চায়।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা এখনো রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হইনি। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করি। তাদের নিয়েই আমরা আছি। আজকে দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। সেই বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এ ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমেরিকার কেউ স্বীকার করেনি। ভারতেরও কেউ স্বীকার করেনি।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। তিনি এমন সময় দেশের হাল ধরেন যখন তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সব দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সময় দেশ একটি দলের হাতে চলে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমরা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছি। এই সরকার দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করেছে। প্রশাসন বলুন আর কিছু বলুন সবকিছু ধ্বংস করেছে। আজকে একটি কোম্পানি ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ তাদের নিজেদের লক্ষ্য সেটা।”
তিনি বলেন, “আমরা ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার লড়াই করে যাচ্ছি। এখানে সবারই ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, অন্যবারের মতো ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সময় মতো আলোচনা সভা হবে। পোস্টার প্রকাশ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করা হবে। বিস্তারিত কর্মসূচি সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনায় চূড়ান্ত হবে।
এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।