“পাশের ভবনের ১২ তলায় আমরা থাকি। আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর খবর পাই। তারপর নিচে নামতেই অনেক ধোয়া, কথাই বলা যাচ্ছিল না। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আমাদের বাড়ির নিচেও রেস্টুরেন্ট। ভয় এখনো কাটছে না। আতঙ্ক নিয়ে এখানে থাকা সম্ভব নয়, তাই বাড়ি ছেড়ে দিয়েছি।”
এভাবেই রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা দিচ্ছিলেন পাশের ভবনে থাকা তানহা।
রাজধানীর অগ্নিদুর্ঘটনার নতুন এক সাক্ষী বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ অগ্নিকাণ্ড। দুই ঘণ্টার আগুনে পোড়া এই ভবন এখন পুরোটাই ধ্বংসস্তূপ। ঘটনার দুই দিন পার হতে চলছে। এর পরও ভবনটি থেকে এখনো পোড়া গন্ধ ভেসে আসছে।
নগরবাসী বলছেন, রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিদুর্ঘটনাগুলো নিজের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আতঙ্ক বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। কারও মুখে আবার শোনা গেছে, এই শহর বসবাসের জন্য অনিরাপদ।
শনিবার (২ মার্চ) সরেজমিনে ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, সাত তলা ভবনের নীচ তলার দরজার কিছুটা দূরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। সামনেই লোহার ব্যারিকেড দেওয়া। ক্রাইমসিনের ফিতা ঝুলিয়ে ভবনটিকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। উৎসুক জনতার ভিড় জমেছে ভবনের সামনের রাস্তা ও বিপরীত পাশের ফুটপাতে।
ওই বিল্ডিংয়ের নীচ তলায় কফির দোকান এবং তৃতীয় তলায় কাপড়ের দোকান ছাড়া সব তলাতেই রেস্টুরেন্ট ছিল। বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ভবনটিতে আগুন লাগে। এর ঠিক ৬ মিনিটের ব্যবধানে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা এলে তাদের প্রায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে ভবনটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
মিরপুর থেকে ঘটনাস্থল দেখতে এসেছেন নাসিমা বেগম। তিনি বলেন, “মিরপুরেও অনেক খাবার দোকান। টিভিতে সেদিন এই আগুন দেখেছি। অনেক মানুষ মারা গেল, খুব খারাপ লাগছে। বাড়িটা দেখতে এসে পোড়া গন্ধ এখনো নাকে লাগছে। এখন বাড়ি থেকে বের হলেও আতঙ্ক লাগে, রাতে ঘুমালেও আতঙ্ক লাগে। এই শহর থাকা মানে আতঙ্ক নিয়ে থাকা।”
রোমান নামের ভবনটির পার্শ্ববর্তী এক ব্যবসায়ী বলেন, “পাশাপাশি বিল্ডিং, পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে নিজেকে নিরাপদ ভাবী কীভাবে? আগুন যেদিন লাগে, আমাদের এদিকে যেন না আসে সেদিন চেষ্টা করেছি। পানি দিয়ে নিরাপদে থাকার চেষ্টা করেছি। এখনো আতঙ্ক কাটছে না।”
তোফাজ্জল হোসেন নামের ভবন দেখতে আসা আরেক ব্যক্তি বলেন, “শহর নিরাপদ না অনিরাপদ এটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। এখানে এসে পোড়াবাড়ি দেখলাম। পোড়া গন্ধ এখনো যায়নি। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রাখছে, তাই ভেতরে ঢোকা যাচ্ছে না।”