“সকাল থাইক্যা বাচ্চাটারে একটা রুটি ছাড়া কিচ্ছু খাওয়াইতে পারি নাই। ঠান্ডার কথা আর কী কমু। স্বামী ফালাই থুইয়া গেছে। একটা পাতলা কম্বল নিয়া রাস্তায় হুইয়া থাকি। কয়েকদিন ধইরা শরীরটাত জ্বর। সরকারি হাসপাতালে যামু সেই শক্তিও পাইতাছি না। রাইত হইলে ফলপট্টিতে দুইজনে হুইয়া থাকি।”—রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন রাস্তার ফুটপাতে শুয়ে কথাগুলো বলছিলেন লাকী আক্তার নামের এক নারী।
রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েকদিন ধরেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এরই মধ্য দেশের কয়েকটি জেলায় বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। তাই বিপাকে পড়েছেন ফুটপাতে রাত কাটানো লাকী আক্তারের মতো ছিন্নমূল মানুষ। শুধু ছিন্নমূল মানুষই নয়, একই অবস্থা খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরও। তীব্র শীতের কারণে কাজে বের হতে পারছেন না তারা। এতে আয় কমেছে তাদের।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বরিশালে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকা বিভাগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গোপালগঞ্জে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২ দিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। যা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রাতের তাপমাত্রা খানিক বৃদ্ধি পেলেও দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
লাকী আক্তারের সঙ্গে আলাপকালে পাশেই বসেছিলেন আব্দুল্লাহ ও জাবেদ নামের দুই ব্যক্তি। দুপুর ১টায় এই দুই ব্যক্তিকে দেখা যায় পরোটা খেতে। আব্দুল্লাহ বলেন, “কয়েকদিন রাতে অনেক শীত। শরীরে একটা জামা ছিল। একজন কাইল রাইতে একটা সুইটার (জ্যাকেট) কিন্যা দিছে। রাস্তায় বোতল টোকাই খাই। দুই দিন ধইরা কাজে যাই না। আইজ সকালে একজনের কাছে পরোটা চাইছি, হেয় দিছে। এখন খাইতাছি সকালের খাবার। আমাগো কষ্ট দেখার কেউ নাই।”
জাবেদ বলেন, “রাইতে দিনে ঠান্ডা সমান লাগে। কবে যে এই ঠাণ্ডা যাইবো। আল্লাহ ভালো জানে। ঢাকায় এইবার শীত বেশি। এমন শীত আগে হয় নাই। আমাগো কষ্টের দিন কষ্টেই যাইবো। একটা শীতের কাপড় একজনে দিছে। এহন একটু শীত কম লাগে।”
রিকশাচালক হানিফ বলেন, “শীতে ভাড়া তেমন নাই। মানুষ বাসেই চড়ে বেশি। বাতাসে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।”