পবিত্র আশুরা উপলক্ষে শিয়া সম্প্রদায়ের শোক আর মাতমের মধ্য দিয়ে এ বছরের তাজিয়া মিছিল শেষ হয়েছে। শনিবার (২৯ জুলাই) শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে পুরান ঢাকা লালবাগের হোসেনি দালান ইমামবাড়ি থেকে তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়। পরে বকশীবাজার রোড, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডি লেকের পার্শ্ববর্তী সীমান্ত স্কয়ারের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
হোসেনি দালান ইমামবাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে সব বয়সের নারী-পুরুষরা মিছিলে অংশ নেন। ছোট-বড় সকলের গায়ে শোভা পাচ্ছিল কালো কাপড়ের জামা। বুক চাপড়ে “হায় হোসেন, হায় হোসেন” বলে মাতম করছিল মিছিলে অংশ নেওয়া হোসেন প্রেমীরা।
এ বছরের তাজিয়া মিছিল সাজানো হয়েছে কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি দিয়ে। বিবি ফাতেমার স্মরণে মিছিলের শুরুতেই দুটি কালো গম্বুজ বহন করা হয়। এছাড়া অংশগ্রহণকারীরা বহন করছেন বিভিন্ন নিশান। কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতির স্মরণে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত নিজের দেহে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্ত ঝরিয়ে মাতম করেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের অনুরোধে গত কয়েকবছর ধরেই ছুরি ব্যবহার দেখা যায় না।
হোসনি দালান ইমামবাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত মিছিলে বহন করা হয় ইমাম হোসেন (রা.)-এর সমাধির প্রতিকৃতি।
মিছিলকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মত। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার হোসাইনি দালানে পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। এরপর থেকেই কঠোর নিরাপত্তা মাধ্যমে তাজিয়া মিছিল পরিচালনা করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র্যাব, সোয়াত বিভিন্ন স্তরের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এই মিছিলকে ঘিরে।
এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আঁতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ডিএমপি কমিশনার।
উল্লেখ্য, হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ, পবিত্র আশুরা। এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন। যা মুসলিম বিশ্ব কারবালার ঘটনাকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। এই দিনে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসল্লিরা ত্যাগ ও শোক পালনে তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করে থাকেন। আরবি ‘তাজিয়া’ শব্দটি উর্দু ও ফারসি ভাষায়ও প্রচলিত এবং এর সাধারণ অর্থ শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা। তবে বিশেষ অর্থে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকাবেগসঞ্চারী অনুষ্ঠানকেও তাজিয়া বলা হয় এবং ইমাম হোসেনের (রা.) শাহাদত লাভের বিষাদময় স্মৃতির উদ্দেশ্যে তা পালিত হয়। তাজিয়া নিয়ে মিছিল করার কারণে এর নাম হয়েছে তাজিয়া মিছিল।