• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হঠাৎ বিভিন্ন দাবিতে সড়কে পেশাজীবীরা, চরম ভোগান্তি


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৪, ০৯:৪৮ পিএম
হঠাৎ বিভিন্ন দাবিতে সড়কে পেশাজীবীরা, চরম ভোগান্তি
রাস্তা বন্ধ করে চলে আন্দোলন। ছবি : সংগৃহীত

ক্ষমতার পালা বদলে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাজধানীতে রাস্তায় নেমেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। পুলিশের উপস্থিতি ছাড়াই এসব কর্মসূচির কারণে যানজটের শহরে ভোগান্তি মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বেতন বৈষম্য দূর করা, চাকরি জাতীয়করণ ছাড়াও কেউ কেউ রাস্তায় নেমেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আবার কেউ সড়কে দাঁড়িয়েছেন পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে। অনেকেই এসেছেন ক্ষমতার ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিচার চাইতে।

রোববার (১৮ আগস্ট) সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব, কাকরাইল, সায়েন্স ল্যাব, নিউ মার্কেট, রমনা, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, উত্তরাসহ আরও কয়েকটি জায়গায় নানা দাবিতে অবস্থান, মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। তবে এসব কর্মসূচি ঘিরে কোথাও পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ঢাকার অফিস-আদালতের কার্যক্রম চালু হওয়ার ধারায় রোববার থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে ঢাকার রাস্তায় যানবাহন ও গণপরিবহন বেড়েছে। বেড়েছে যানজটও। এমন পরিস্থিতিতে সড়কে সড়কে নানা কর্মসূচির কারণে যানজটের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।

বেতন বৈষম্য থেকে মুক্তি এবং চাকরি জাতীয়করণ করে পুলিশ সদস্যদের মতো রেশন ও পেনশন সুবিধার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল থেকেই সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। বেতন বৈষম্যবিরোধী গ্রাম পুলিশ সমন্বয় কমিটির ব্যানারে কর্মসূচিতে নামা অবরোধকারীরা কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিকেলে অবস্থান নেন কাকরাইলের প্রধান বিচারপতির বাসবভনের সামনের মোড়ে।

সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকলেও অবরোধকারীদের দেখে তারা সরে যান। সব মিলে কাকরাইল ঘিরে পল্টন, শান্তিনগর ও রমান পার্কের চার পাশের রাস্তাগুলোয় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। গত ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ১৪ অগাস্ট থেকে গ্রাম পুলিশ সমন্বয় কমিটির ব্যানারে এই আন্দোলন শুরু হয়।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন। চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য অবস্থান করছেন বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা স্বেচ্ছাসেবী (মহিলা) দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ। মাদ্রাসা বোর্ডে বৈষম্য রোধের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি।

তৃণমূল নাগরিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ করছে। প্রেস ক্লাব থেকে শিক্ষা ভবনের দিকে যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ‘সাধারণ’ ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা।

প্রেস ক্লাবের সামনে জায়গা না পেয়ে তৎকালীন বিডিআর থেকে চাকরিচ্যুত সদস্যদের একটি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিতে চান তারা।

সায়েন্সল্যাব মোড়ে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বেলা ৩টার দিকে একদল শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে। হলে থাকার সিটের নিশ্চিয়তার দাবিতে নিউ মার্কেটের সামনে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। সায়েন্সল্যাব ও নিউ মার্কেটের দুই কর্মসূচির কারণে কয়েক ঘণ্টা গাড়ি চাকা থমকে যায় শাহবাগ থেকে ধানমন্ডি পর্যন্ত প্রায় সড়কে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় রমনার যমুনা অতিথি ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের নারীরা। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জনবলসহ প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবি তোলেন তারা।

এর আগে সকালে বাংলামোটরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সামনে ও কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে দাবি আদায়ে ব্যানার নিয়ে লোকজনকে দাঁড়াতে দেখা গেছে। রমনা, বাংলামোটর ও কাকরাইলের রাস্তায় কর্মসূচির কারণে ফার্মগেট, মগবাজার ও পান্থপথসহ আশাপাশের সব সড়কে যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় মানুষকে।

রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনের ব্যস্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে একরামুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চেয়ে তারা রাস্তায় নামলে রামপুরার উত্তরে বাড্ডা ও দক্ষিণে মালিবাগ-মৌচাক পর্যন্ত সড়কে গাড়ির চাকা থমকে যায়। এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে সড়ক অবরোধ করেন সেখানকার পরীক্ষার্থীরা। ওই এলাকার বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাতে অংশ নেয়। ফলে উত্তরার সড়কেও ভোগান্তিতে পড়েন আরোহীরা।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের-ডিএমপির ট্রাফিক রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সোহেল রানা বলেন, “সব স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ায় সড়কে এমনিতেই চাপ ছিল বেশি। সব মিলিয়ে সড়কে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, কোথাও কোথাও সড়কে ধীরগতি হয়েছে। যানজট স্বাভাবিক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যেসব সড়ক বন্ধ, ডাইভারশন দিয়ে অন্য সড়কে পাঠিয়ে যান চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।” 
সূত্র : বিডিনিউজ।

Link copied!