দেশে একক মাসে আসা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২৮ দিনে দেশে যে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে তা কখনই আসেনি। রেকর্ড ভাঙা এই রেমিট্যান্সের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পণ্য রপ্তানির আয়। যার প্রভাব গিয়ে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২৫.৪৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৪৪ কোটি মার্কিন ডলার।
প্রতি বছর দুই ঈদ ঘিরে দেশে প্রবাসী আয়ের প্রভাব বেড়ে যায়। বিশেষ করে রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরে এই রেমিট্যান্স অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি হয়। তবে এবছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। এমনিতে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রেমিট্যান্সের পরিমাণ প্রতি মাসেই বেড়ে গেছে। তবে চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনে আসে ২.৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। যা দেশের ইতিহাসে যেকোনো মাসের জন্য সর্বোচ্চ। তবে পরের দুদিনও অব্যাহত ছিল রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহ।
রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহের সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম মুনশি জানান, গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত দেশে প্রায় ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের রেকর্ড প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে মোট রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৪৪ কোটি ডলার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়ালের (বিপিএম-৬) মান অনুযায়ী, বাংলাদেশের নেট রিজার্ভ বর্তমানে ২০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সূত্রমতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত ৯ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের আমদানি বিল বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। যে কারণে তখন প্রকৃত রিজার্ভ কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। রিজার্ভ কমে হয় ১ হাজার ৯৭৫ কোটি ডলার। তবে চলতি মাসের ২০ দিনের মধ্যেই রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রবাসী ও পণ্য রপ্তানির আয়। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনে দেশে যে ২৯৪ কোটি মার্কিন ডলার এসেছে একক মাসে দেশে এত বিপুল রেমিট্যান্স আগে কখনই আসেনি। গেল বছরের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স ছিল ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার। ঈদের আগে এত বেশি রেমিট্যান্স প্রবাহ দেখা যায়নি।
তবে ২০২৪ সালের শুরু থেকে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি বাড়তে থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাবে তা কমে যায়। প্রবাসীরা ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে সে মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যায়।
তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হাওয়া লাগে রেমিট্যান্সের পালে। হু হু করে বাড়তে শুরু করে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ। যার প্রভাব গিয়ে পড়ে রিজার্ভে। এবার মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে যে রেমিট্যান্স এসেছে তা বৈদেশিক রিজার্ভের ক্ষেত্রে সুফল এনেছে।