দেশের কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়। এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে অনেক গ্রাম। এসময় গাছচাপা ও বজ্রপাতের কারণে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
পটুয়াখালী
বাউফলে হঠাৎ ঝড়ের তাণ্ডবে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় স্থানীয় অনেকের গাছপালা ও ঘরবাড়ি ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত এ ঝড় স্থায়ী হয়। এ সময় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়েছে।
নিহতরা হলেন উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে রাতুল (১৪)। তাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে বজ্রপাতে সে মারা গেছে। অপর নিহতের নাম সুফিয়া বেগম (৮৫)। তিনি দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী। ঘরের ওপর গাছ পড়ে তিনি মারা যান।
ভোলা
আকস্মিক ঝড়ে ভোলার মনপুরা ও লালমোহনে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে বিপুল সংখ্যক গাছপালা। ঝড়ের কবলে পড়ে মনুপরার দাসের এলাকায় ৬ মাঝি মাল্লাসহ একটি জেলে ট্রলার ডুবে গেছে। এছাড়া লালমোহনের বদরপুরে ঘরচাপায় হারিস নামের এক বৃদ্ধ এবং তুজমিদ্দনের শম্বুপুরে মো. মনজুরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক ঝড়ের মধ্যে বজ্রপাতের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে মারা গেছেন।
ঝালকাঠি
ঝালকাঠির দুই উপজেলায় ঝড়ের সময় মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই নারী ও এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট, পোনাবালিয়া ইউনিয়ন এবং কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের মুন্সিরাবাদ গাজীবাড়ি এলাকার মৃত আলম গাজীর স্ত্রী গৃহিনী হেলেনা বেগম, সদর উপজেলার শেখেরহাট এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী গৃহিনী মিনারা বেগম ও পোনাবালিয়া এলাকার মো. বাচ্চুর মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মাহিয়া আক্তার ঈশান।
ঝড়ের আধা ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডবে ঝালকাঠির চার উপজেলায় শতাধিক বসতঘর, দোকানপাট, বিদ্যুতের খুটি ভেঙে পড়ে। এ সময় গাছপালারও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পিরোজপুর
পিরোজপুরে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে গাছচাপায় রুমি বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রুবী বেগমের বাড়ি শারিকতলা ইউনিয়নের মরিচাল গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে ১০টার দিকে হঠাৎ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে অন্ধকারে ঢাকা পড়ে পিরোজপুর। এরপরই শুরু দমকা হওয়া। প্রায় ১৫ মিনিটের ঝড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ। গাছপালা পড়ে বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।
বাগেরহাট
ঝড়ের সময় গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে আরিফুল ইসলাম লিকচান (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এসময় গাছপালা ও বিলবোর্ড ভাঙাসহ অন্তত দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া আহত হয় অন্তত ১০ জন। সকাল ৯টা ৪০ থেকে ১০টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলা ঝড়বৃষ্টিতে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়।
স্থানীয়রা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসে পুরো জেলা। এর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি। এতে বাগেরহাট সদর উপজেলার পুটিমারি, রাধাবল্লভ, গবরদিয়য়, ডেমা, বাশবাড়িয়া, শহরতলীর মারিয়া পল্লী ও কচুয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এ ছাড়া বাগেরহাট টার্মিনাল এলাকায় ঝড়ে বিলবোর্ড পড়ে একটি বাস ও পাঁচটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দুইজন বাস শ্রমিক আহত হয়েছেন। ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
যশোর
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় বজ্রপাতে আব্দুল মালেক পাটোয়ারী (৬৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শংকরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র চ্যাটার্জী জানান, আব্দুল মালেক সকালে বাড়ির পাশের মাঠে ইরি ধানের ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করতে যান। বাড়ি ফেরার পথে সকাল ৯টার দিকে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। পরে অন্য কৃষকরা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়।
খুলনা
খুলনায় ঘাস কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মো. ওবায়দুল্লাহ গাজী (২৯) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়ার কোমলপুর গ্রামের একটি বিলে বজ্রপাতের ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। ওবায়দুল্লাহ একই গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেন গাজীর ছেলে।
নেত্রকোনা
বজ্রপাতে নেত্রকোনায় খালিয়াজুরী উপজেলার হাওরে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার রাজঘাট হাওরে বজ্রপাতে এ নিহতের ঘটনা হয়। নিহত ৫২ বছর বয়সী শহীদ মিয়া উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে।
নিহতের ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের সামনে রাজঘাট হাওরে মরিচ ক্ষেতের পরিচর্যা করছিলেন তার ভাই। দুপুরের দিকে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আমার ভাই। এতে আমাদের গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।