• ঢাকা
  • সোমবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

‘অর্থনীতির বাস্তব চিত্রের সঙ্গে পরিসংখ্যান মেলে না’


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম
‘অর্থনীতির বাস্তব চিত্রের সঙ্গে পরিসংখ্যান মেলে না’
প্রতীকী ছবি

অর্থনীতির বাস্তব চিত্রের সঙ্গে পরিসংখ্যান মেলে না বলে মনে করছে শ্বেতপত্র কমিটি। অর্থনীতির পরিস্থিতি নিরূপণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা শ্বেতপত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রোববার (১ ডিসেম্বর) এ শ্বেতপত্র হস্তান্তর করা হয়।

শ্বেতপত্র কমিটির তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, পরিসংখ্যানগত দিক থেকে তা ব্যতিক্রমী হলেও তা ছিল এক অলীক বিষয়। সমপর্যায়ের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ছিল বেশি। বিষয়টি সবার নজরেই এসেছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের সঙ্গে প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান মেলে না, এই অভিযোগ অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই করে আসছেন। ফলে এই উচ্চ হারের প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।

শ্বেতপত্র কমিটি মনে করছে, অর্থনীতির বাস্তব চিত্রের সঙ্গে পরিসংখ্যান মেলে না। সে জন্য তারা এই উচ্চ হারের প্রবৃদ্ধিকে ধাঁধার সঙ্গে তুলনা করেছে। তথ্য-উপাত্ত নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা হলে বোঝা যায়, এই পরিসংখ্যান ভুল। ২০১০-২০১৯ সালে যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার উৎস অজ্ঞাতনামা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার তৃতীয় পক্ষের স্বাধীন পর্যালোচনা ছাড়াই প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারিভাবে সংগৃহীত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই কেবল তা করা হয়েছে। কেবল সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে দেখা গেছে, দুঃসময় বা দুর্যোগের সময়ও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ছিল অত্যন্ত চাঙা।

প্রতিবেদনের ভাষ্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার নিরূপণের বিভিন্ন মডেল আছে, যেসব মডেলে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের মধ্যে তাত্ত্বিক সম্পর্ক থাকে, যেমন শ্রম, পুঁজি, উৎপাদনশীলতা। কিন্তু এসব প্রথাগত মডেলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার ব্যাখ্যা করা যায় না। ফলে শ্বেতপত্র কমিটি মনে করছে, এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত পক্ষপাত ছিল।

এ ছাড়া কোভিড-১৯ মহামারির যে সরলরৈখিকভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তথ্য-উপাত্ত ও পদ্ধতিগতভাবে তা ব্যাখ্যা করা যায় না। এই সরলরৈখিক উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণ হিসেবে শ্বেতপত্র কমিটি মনে করে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রচারণার স্বার্থে রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তিরা প্রবৃদ্ধির গতি বাড়িয়ে দেখিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে যে রাজনৈতিক কর্তা সবচেয়ে উৎসাহী ও প্রভাবশীল ছিলেন, তার প্রস্থানের পরও পরিসংখ্যান ব্যুরোর মধ্যে সেই রেশ থেকে গিয়েছিল। ওপর মহলের ক্রোধের ভয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরো ধারাবাহিকভাবে ভুল পরিসংখ্যান প্রকাশ করে গেছে। টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে বিবিএসের তথ্য-উপাত্তের যে পর্যালোচনায় হতো, ২০১৫ সালের পর তা একেবারে ভেঙে পড়ে।

শ্বেতপত্র কমিটি দেখিয়েছে, আন্তর্জাতিক প্যানেল ডেটা ব্যবহার করে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ মহামারির চার, পাঁচ বছর আগেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে গিয়েছিল। কমিটি শুধু গত ১৬ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ১৯৯৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করেছে।

এতে দেখা যায়, এই সময় প্রকৃত প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে আনুষ্ঠানিক প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম ছিল। এই প্রবণতা উত্তরোত্তর কেবল বেড়েছে। অর্থাৎ এই বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।

সূত্র : প্রথম আলো।

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!