বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) শীর্ষ পর্যায়ের ৪০ কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকেই বিভিন্ন শাখার ব্যবস্থাপক; অন্যরা প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে আছেন। এ ঘটনায় ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ছাঁটাই–আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার (২ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে পদত্যাগের নির্দেশ পাওয়া দুজন কর্মকর্তা বলেন, শুধু চট্টগ্রামে বাড়ি হওয়ার কারণে তাদের পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে, যদিও কোনো ধরনের অনিয়মে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। যেসব বিভাগে অনিয়ম হয়েছে, সেসব বিভাগে তারা কখনো কাজ করেননি। তবে তালিকার অনেকেই অনিয়ম হওয়া বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।
একটি সূত্র জানায়, ৪০ কর্মকর্তার মধ্যে কয়েকজন ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। অনেকে এই সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলেও জানা গেছে। ব্যাংকটি সব মিলিয়ে ১০০ কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত করেছে।
জানা যায়, ইউসিবির নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরীর পরিবারের হাতে। শুরু থেকে ব্যাংকটির সঙ্গে যুক্ত ছিল ব্যবসায়ী গোষ্ঠী পারটেক্স গ্রুপ। কিন্তু ২০১৭ সালে পারটেক্স গ্রুপের প্রতিনিধিদের ইউসিবি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়। ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন রুকমিলা জামান। কিন্তু তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় মূলত সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীই ব্যাংকটি পরিচালনা করতেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো এক চিঠিতে ইউসিবির কিছু শেয়ারধারী অভিযোগ করেন, রুকমিলা জামান ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী কার্যত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন এবং তার ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের কারণে’ ব্যাংকটি দেউলিয়া হওয়ার পথে।
ওই চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যে সম্পদ মূলত ‘ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা লুট করে’ গড়ে তোলা হয়েছে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক আগের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিলে নতুন চেয়ারম্যান হন অনন্ত গ্রুপের শরীফ জহির। এরপর ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরীও পদত্যাগ করেন। নতুন এমডি হিসেবে যোগ দেন ব্যাংকটির সাবেক ডিএমডি মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ। ইউসিবির প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি যাচাই করে দেখতে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে নিরীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ।
জানা যায়, এসব নিরীক্ষার কয়েকটি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এতে যাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাঁদের অনেককে ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করার জন্য বলা হয়েছে; পাশাপাশি আরও অনেককে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে চাকরিচ্যুত করা হবে। তখন সুযোগ-সুবিধা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান শরীফ জহির ও এমডি মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।