দেশের ১২টি জেলায় বন্যার্ত মানুষের পাশে সমন্বিত শক্তি ও সামর্থ্য নিয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা।
সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো দেশের ২৭ জন নাগরিকের বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ বন্যায় বিপর্যস্ত। এ পর্যন্ত অন্তত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সাহায্যসামগ্রী নিয়ে বন্যার্ত মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন ছাত্র-শিক্ষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। অন্তর্বর্তী সরকারও পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার এবং জরুরি ত্রাণসামগ্রী বিতরণের ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে।
নাগরিকরা বলেছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে সাহায্যসামগ্রী সংগ্রহ করে বন্যার্তদের জন্য পাঠানো হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলেও এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগের সময় দেশের সচেতন ও সাধারণ মানুষ যে কতটা সংবেদনশীল এবং অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে কতটা আন্তরিকভাবে আগ্রহী, এটা তারই সাক্ষ্য বহন করে।
বন্যার্তদের পাশে সমন্বিতভাবে দাঁড়াতে কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় বিবৃতিতে। সেগুলো হলো সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়াতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা; শুকনা খাবার, পানি, পোশাক, জরুরি ওষুধ, নগদ অর্থ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী দ্রুত সংগ্রহ করে নিকটস্থ শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ত্রাণকেন্দ্রে পৌঁছানো; প্রয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা; পরিবহন খরচ বিবেচনায় আলাদাভাবে ত্রাণসামগ্রী বন্যার্তদের কাছে নেওয়ার বদলে সমন্বিতভাবে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা; দূরবর্তী ও দুর্গম এলাকার পানিবন্দী মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা করা; বৈষম্যের শিকার সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক মানুষের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বন্যার সময় কোনো ধরনের অপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যৌন হয়রানি হচ্ছে কি না, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। এমন কোনো ঘটনার তথ্য পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা নিতে হবে এবং মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল; নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস; কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী; ঢাবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী; সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান; বিএনডব্লিউএলের নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী; অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা; নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন; ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম; বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ; বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের পরিচালক নায়লা জে খান; মানবাধিকারকর্মী নুর খান; ঢাবির অধ্যাপক জোবায়দা নাসরিন; মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান; যুক্তরাষ্ট্রের পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইদুল ইসলাম; থাইল্যান্ডের মাহিডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোজিনা বেগম; সাংবাদিক সাঈদা গুলরুখ; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তবারক হোসেইন, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আশরাফ আলী; ব্যারিস্টার শাহাদাত আলম; বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা; আদিবাসী অধিকারকর্মী হানা শামস এবং সাঙ্গাতের সদস্য মুক্তাশ্রী চাকমা।