• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বসন্তের রঙে রঙিন শাহবাগ


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৯:৩১ পিএম
বসন্তের রঙে রঙিন শাহবাগ
শাহবাগে ফুলের দোকান। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। গোলাপ, গাদাসহ বিভিন্ন কাঁচা ফুলের মৌ মৌ সুঘ্রাণে সুবাসিত শাহবাগের চারপাশ। যদিও এমন চিত্র প্রতিদিনের। তবে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ নানা আয়োজনকে কেন্দ্র করে আরও জমে উঠেছে ফুলের বাজার। এবার আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বসন্ত ও ভালোবাসার যুগপৎ এই উদযাপন ঘিরে বাসন্তী সাজে ফুলের দোকানগুলোতে ভিড় জমিয়েছেন তরুণ-তরুণীরা। তরুণদের গায়ে রঙিন পাঞ্জাবি, তরুণীদের পরনে বাসন্তী শাড়ি, খোঁপায় গাঁদার মালা; হাতে ও গলায় তাজা ফুলের অলংকার—এ যেন বসন্ত উৎসব। কেউ ফুল কিনছেন, কেউবা ফুলের সঙ্গে নিজেকে মুঠোফোনে বন্দী করছেন। তাদের এমন আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে শাহবাগের চারপাশ।

তবে আনন্দ নিয়ে ফুলের বাজারে গিয়ে দাম শুনে চোখ কপালে ক্রেতার। গতবারের চেয়ে এবার অস্বাভাবিক ফুলের দাম বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন তারা। রোদেলা নামের এক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমি ১২০ টাকা দিয়ে একটি ফুলের তোড়া কিনেছি। আমি মূল জারবারা কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু সেটি দাম বেশি হওয়ায় অন্য ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “কিছুদিন আগেও শাহবাগে এসেছিলাম। তখন একটি গোলাপের দাম শুনেছিলাম ২৫-৩০ টাকা। কিন্তু আজ সেই একই গোলাপ বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা। যা অস্বাভাবিক লেগেছে আমার কাছে।”

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে, শাহবাগের বটতলা ফুল দোকানগুলোয় বর্তমানে দাম ভেদে প্রতিটি দেশি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, যা সাধারণ সময়ে ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। ৪০ টাকার প্রতিটি চায়না গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। অন্য জাতের বিদেশি গোলাপ প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত, যা সাধারণ সময়ে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেন বিক্রেতারা।

শাহবাগে ফুলের দোকান। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

এছাড়া বর্তমানে প্রতিটি চন্দ্রমল্লিকা ৩০ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস ৪০ টাকা, জারবেরা ৩০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ২০ থেকে ৩০ টাকা, লিলি (আঁটি) ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, ক্যালেন্ডোলা ১০ থেকে ২০ টাকা, চায়না মাম (আঁটি) ১০০ টাকা, সবুজ মাম (আঁটি) ৮০ টাকা, জিপসি (আঁটি) ৪০ থেকে ২০০ টাকা, গাঁদার লতা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাধারণ সময়ে প্রতিটি চন্দ্রমল্লিকা ৫ থেকে ১০ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস ২০ টাকা, জারবেরা ১৫ থেকে ২০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ১০ থেকে ১৫ টাকা, লিলি (আঁটি) ৩০০ টাকা, ক্যালেন্ডোলা ৫ থেকে ১০ টাকা, চায়না মাম (আঁটি) ৫০ টাকা, সবুজ মাম (আঁটি) ৫০ টাকা, জিপসি (আঁটি) ১০ থেকে ৫০ টাকা, গাঁদার লতা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফুল ছাড়াও বর্তমানে বেলির মালা প্রতিটি ২০ টাকা, মাথার রিং ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকার গাজরা ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেগুলো সাধারণ সময়ে যথাক্রমে ২০ টাকা, ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। অর্থাৎ বিশেষ দিবস ঘিরে ফুলের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফুলের তোড়া ফুল ও আকার অনুযায়ী ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ সময়ে এই ফুলের তোড়ার দামও কম থাকে।

নার্সারি থেকেই এবার ফুলের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, কোনো দিবস এলেই ফুলের চাহিদা বাড়ে। আর ফুল মজুত করে রাখার মতো অবস্থা নেই। তাই ফুলের দাম বাড়ে।

জানতে চাইলে শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পয়লা ফাল্গুনে যেখানে দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। কারো সাথে কথা বলার সময় থাকে না। সেখানে আপনি দেখেন যা ক্রেতা এসে সবাইকে গুণতে পারবে না। সেই প্রেক্ষিতে পহেলা ফাল্গুনে যে ফুল বিক্রি তা মন্দা যাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাগান মালিকরা এবার ফুলের দাম বাড়িয়েছেন। দেশি প্রতিপিস গোলাপ ফুল বাগান থেকে কিনতে হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। ভারতের গোলাপ ৬০-৭০ টাকা। চায়না বা মালয়েশিয়ান গোলাপ প্রতিপিস ১৪০-১৫০ টাকা কিনতে হচ্ছে।”

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের এখানে সরকারি বৈধভাবে ৫০টি দোকান রয়েছে। সে হিসেবে আমরা ৫০ লাখ টাকার মতো ফুল তুলেছি। আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার এবার ফুল বিক্রি লক্ষ্য আছে আমাদের।”

শাহবাগে ফুলের দোকান। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

তথ্য বলছে, একদিনের ব্যবধানে ৩০০ ফুলের এক বান্ডিল লাল গোলাপের দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা হাঁকছেন ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। ধরনভেদে ৫০টি ফুলের এক আঁটির দাম নেয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এছাড়া গাদা ফুল ৮০টির ঝোপায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে আড়াই শ থেকে ৩০০ টাকা।

সহধর্মিণীকে নিয়ে শাহবাগে ফুলের তোড়া কিনতে এসেছিলেন কাউসার। এক-দুইটি দোকান ঘুরে ফুলের তোড়ার দামদর করে কিছুটা চিন্তিত মনে হলো তাকে। কিছুক্ষণ পর ১২০০ টাকা দিয়ে লাল টকটকে গোলাপের একটি তোড়া কিনলেন তিনি। গোলাপের দাম নিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় কাউসারের। তিনি বলেন, “খুব ইচ্ছে নিয়ে ফুল কিনতে এসেছিলাম। তবে যা দাম দেখলাম তাতে অনেক বেশি মনে হয়েছে। যদিও দাম এত বেশি হওয়ার কথা না। কিন্তু কী আর করার ফুলের দাম বেশি হলেও কিনতে হবে। কারণ ভালোবাসা দিবস তো বছরে একবারই আসে। যদি সেই দিবসেও সহধর্মিণীকে ফুল কিনে দিতে না পারি তাহলে তো ভালোবাসা প্রকাশ হলো না।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিবছর কোনো দিবস এলেই ফুলের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। যদিও এই দাম নিয়ে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করলেও দেখার মতো কেউ থাকে না। বাগানে ফুলের দাম কম, দোকানগুলোতে বেশি। এখন একজন মানুষ চার-পাঁচটি ফুল কেনার জন্য তো বাগানে যাবে না। আমি যেমন একটি ফুলের তোড়া কিনলাম ১২০০ টাকা দিয়ে। স্বাভাবিক সময়ে এই তোড়া খুব বেশি হলে ৭০০ টাকা হবে। কিন্তু এখন ১২০০ টাকা। এমন সব ফুলেই অনেক দাম বেড়েছে।”

Link copied!