ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ৮৮তম জন্মদিনে ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান’ বিষয়ে নিয়ে একক বক্তৃতা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত।
শুক্রবার (২৩ জুন) বিকালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ এস এম কামালউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক আজফার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নিজেই একক বক্তব্য প্রদান করেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “ব্যক্তিমালিকানা পরিত্যাগ করে আমাদের সামাজিক মালিকানায় যেতে হবে। ৬৯ এর অভ্যুত্থান সামাজিক মালিকানার সম্ভাবনাকে এগিয়ে এনেছিল। ৬৯ সামাজিক বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিল। ৬৯ এর মূল বাণী ছিল ‘সামাজিক বিপ্লবের’।”
জন্মদিনে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন বিক্রমপুরের বাড়ৈখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষা জীবন কেটেছে রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা ও যুক্তরাজ্যে।
ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৫০ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগোরিস হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে ভর্তি হন নটরডেম কলেজে। সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েটে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। ১৯৫৬ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর নিজ এলাকা মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। এসময় জগন্নাথ কলেজেও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন এ শিক্ষাবিদ। পরের বছর ১৯৫৭ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট এবং লেজিস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালে তিনি মাসিক পরিক্রমা (১৯৬০-৬২), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা (১৯৭২), ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র (১৯৮৪) ইত্যাদি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
অধ্যাপকের পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘নতুন দিগন্ত’ সম্পাদনা করছেন। প্রবন্ধ, অনুবাদ ও কথাসাহিত্য মিলিয়ে তার রচিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১১০টি। তার লেখা কয়েকটি বই ‘বঙ্কিমচন্দ্রের জমিদার ও কৃষক’,‘বাঙালীর জাতীয়তাবাদ’, ‘জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি :১৯০৫-৪৭’, ‘দুই যাত্রায় এক যাত্রী’ উল্লেখযোগ্য।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনে অবিচল। তার বিভিন্ন লেখায় সমাজ বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে এসেছে। তার প্রাঞ্জল ও সুখপাঠ্য রচনাগুলোতে আরও উঠে এসেছে গভীর দার্শনিকতা ও ইতিহাস চেতনা।
শিক্ষক হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয়। সত্তরের দশক থেকে বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে আসছেন তিনি।