• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষিতে নীরব বিপ্লব


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩, ১২:১৪ পিএম
কৃষিতে নীরব বিপ্লব

বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে আরও বিকশিত হচ্ছে এ খাত। হচ্ছে আধুনিকায়ন। এর ফলে গ্রামে গ্রামে ঘটছে নীরব কৃষি বিপ্লব। শহরাঞ্চলেও জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদ বাগান।

স্বাচ্ছন্দ্য, অনায়াস উদ্দীপনা, উদ্যম ও শক্তি নিয়ে দিনরাত মাঠে পরিশ্রম করে অর্থনীতির চাকা ঘোরাচ্ছেন কৃষকরা। এতে কৃষি বিপ্লবে আসছে গতিশীলতা। অনেকাংশেই চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। তৃণমূল অর্থনীতির কাঠামো মজবুতের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে কৃষি। মাঠের উৎপাদনে অনেক গ্রাম এখন পরিণত হয়েছে শহরে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফিল্ড সার্ভিস উইংয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সারা দেশে কৃষি কর্মকাণ্ডে এসেছে বিরাট গতিশীলতা। দেশের বিভিন্নস্থানে এখন এক জমিতে চার ফসলী শস্য আবাদের চেষ্টা চলছে। জোর দেওয়া হয়েছে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে। সে জন্য সাথী ফসল উৎপাদনের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে।

কৃষি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে শুধুমাত্র চাল উৎপাদন হচ্ছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। ধান, গম, ভুট্টাসহ মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় ৫ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষে বিশ্বের মধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও মূল্যায়ন, কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি প্রণয়ন, উপকরণের চাহিদা পূরণ ও মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। করার পরামর্শ বিজ্ঞানীদের। দেশের ৪৮৫ উপজেলায় ১২ হাজার ৬৪০টি ব্লক রয়েছে। সবখানে সমানতালে জোরদার হলে আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে কৃষি উৎপাদন।

জলাবদ্ধতার নিরসন, সারফেস ওয়াটার ডেভলপমেন্ট, ক্ষুদ্র সেচ, বেড়ি বাঁধ নির্মাণ, রেগুলেটর, বক্স কালভার্ট, পাইপ কালভার্ট ও জলকপাট নির্মাণ এবং পাম্পিং মেশিন স্থাপনে কৃষকরা উপকৃত হতে শুরু করেছে। বহুমুখী প্রকল্পে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ৩২ হাজার ২২৫ হেক্টর অনাবাদী জমি আবাদের আওতায় আসছে। বোরো, রোপা, আউশ, আমন, পাট, রবিশস্য ও সবজিসহ সব ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। মানুষ এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখছে না। বাড়ির উঠানে, আনাচে কানাচে সবজি উৎপাদন হচ্ছে মাঠের বাইরেও। কৃষকের পাশাপাশি কৃষকের গৃহিণীরাও এখন পুরাদমে কৃষি উৎপাদনে সময় ব্যয় করছেন।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কৃষিখাতে সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপে দেশে কৃষিজাত আয় ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। কৃষিতে আসছে অভাবনীয় সাফল্য। তবে কৃষকের স্বার্থে কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ সহজ ও উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেওয়াসহ সমস্যাদির সমাধান হলে কৃষিতে শতভাগ সাফল্য আনা সম্ভব।

এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু বলেছেন, বর্তমানে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে প্রতি বিঘা জমিতে ২৫ মনের অধিক ধান আবাদ সম্ভব হচ্ছে। নতুন নতুন জাত মাঠে ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিজ্ঞানীরা নিরলস পরিশ্রম করছেন। কৃষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, গবেষণাগার তৈরি ও গবেষণার কাজে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে কৃষিতে এই বিপ্লব ঘটিয়েছেন।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষি ও কৃষক বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাই অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এই খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, কৃষি ও কৃষকের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই স্বাধীনতার পরই তিনি দেশের কৃষিখাতের উন্নয়নে নানামুখী পরিকল্পনা করেন। বর্তমানে তাঁরই সুযোগ্যকন্যা সেই পথ অনুসরণ করে কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন।

Link copied!