গতি আনতে নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে দেশের প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে। এজন্য গত ১০ দিনের ব্যবধানে শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশই পুলিশ কর্মকর্তা। রয়েছে অতিরিক্ত সচিব ও উপসচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তারাও।
জানা গেছে, এই তালিকায় প্রশাসন ও পুলিশের আরো অনেক কর্মকর্তার নাম রয়েছে। শিগগিরই এসব কর্মকর্তাদের নতুন কর্মস্থলে বদলি বা পদায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে সূত্র। সংশ্লিষ্ট দপ্তর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
চলতি মাসে ৩২ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে পুরোনোদের অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। এছাড়াও সচিব, উপসচিবসহ ও বিভাগীয় পদমর্যাদার আরো ২০ জনের দপ্তর পরিবর্তন করা হয়।
জানা গেছে, রোববার (১৬ জুলাই) ডিআইজি ও আইজি পদমর্যাদার ৫১ জনকে বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে। ঠিক এর তিনদিন আগেও ২৬ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন করা হয়। এছাড়া দেশের কয়েকটি জেলায় নতুন পুলিশ সুপার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপার, ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), এসআইসহ পুলিশের বিভিন্ন পদে আরো ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এরইমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ওসি পদে রদবদল শুরু হয়েছে।
এদিকে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের এই রদবদলকে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে দেখছেন বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো।
তবে জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বলছে, এটি দাপ্তরিক রুটিন ওয়ার্ক। এই পরিবর্তন বা রদবদলের সঙ্গে নির্বাচনী কৌশলের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে প্রশাসনে হঠাৎ এমন রদবদলের হিড়িক পড়েছে কেন? তা নিয়ে রাজনীতি সচেতন মানুষের মাঝেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই মুহূর্তে এমন বদলির হিড়িক নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
মতিঝিলের ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম বলেন, ”বিভিন্ন খবরে দেখছি, ব্যাপক রদবদল আর বদলির খবর। হঠাৎ কেন এতো বদলি, তা বুঝতে পারছি না। মানুষ বলতেছে এটা কোনো কৌশল।”
টিকাটুলির আবাসন ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, “প্রশাসনিক প্রয়োজনে বদলি বা রদবদল হতেই পারে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নির্বাচন সামনে বলে সরকার বিরোধীরা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।”
অপরদিকে, জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল তাদের মতো করে প্রশাসন ঢেলে সাজান। এটা দোষের কিছু নয়। যে সব কারণ দেখিয়ে এসব বদলি বা রদবদল করা হয় তা প্রশাসনিক বা দাপ্তরিক নিয়মের মধ্যেই আছে। তাই এই সুযোগটা তারা কাজে লাগান। এটা পৃথিবীর সব দেশেই ক্ষমতাসীনরা করে থাকেন। এটা দোষের কিছু নয়।
আবার বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, রদবদল বা পরিবর্তনের এই মাত্রা বেশি হলে বা ভারসাম্য নষ্ট হলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হতে পারে। প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল বা ভেঙে পড়তে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখা উত্তম।
এই রদবদলকে নিয়মিত কার্যক্রম বলছেন, জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসলে উদ্দিন আহমেদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সামনে জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রীক হয়তো টেস্টকেস হতে পারে এটি। অথবা কর্মকর্তাদের পারফরম্যান্স যাচাই করছে সরকার। তবে জেলা প্রশাসনে বদলি বেশি হচ্ছে। ২/৩ মাসের মধ্যেও কাউকে কাউকে বদলি করা হচ্ছে।”
এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, “ফিল্ড লেভেলে কর্মকর্তাদের পারফর্ম যাচাই করার জন্য বা মাঠপর্যায়ে কতটুকু দক্ষ হয়েছে সেটি বোঝার জন্য এ কৌশল ব্যবহার করা হয় অনেকসময়। তবে সিভিল সার্ভিসে নিয়মনীতি রয়েছে। কোনো কর্মকর্তাকে পদায়নের পর অন্তত ২-৩ বছর কাজ করতে দেওয়া উচিত। যদি তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো দূর্নীতির অভিযোগ না থাকে।”
জানা যায়, রবিবার (১৬ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলাদা দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করে একদিনে ১৬ ডিআইজি এবং ৩৫ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি-পদায়ন করা হয়।
একই দিন ২ জন অতিরিক্ত সচিব ও ৪ জন উপসচিবকে বদলি ও পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই সময়ে স্বাস্থ্যবিভাগসহ আরো কয়েকটি দপ্তরে প্রেষণে বদলি ও পদায়ন করা হয়।
অপরদিকে, গত ৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠপ্রশাসন-২ শাখার উপসচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে দেশের ৩২ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক, এবং ২২ জন অতিরিক্ত সচিব ও উপ-সচিবকে বদলি-পদায়ন করা হয়।
এর ঠিক তিনদিনের মাথায় ৯ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আরেকটি প্রজ্ঞাপনে আরো কয়েকজন সচিব ও উপ-সচিবকে বদলি করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের সবাইকে একইসঙ্গে মাঠে পাঠানো হবে। এর আগে আনুষাঙ্গিক প্রশিক্ষণ, ব্রিফিং শেষ করতে সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগতে পারে। এর আগে গত ১২ মার্চ ৮ জেলায় ডিসি পদে রদবদল করেছিল সরকার।