বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে (শিশু হাসপাতাল) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতালের পঞ্চম তলায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিকেলে সরেজমিনে ঢাকা শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, “হাসপাতালটির যেই ফ্লোরে আগুনের সূত্রপাত সেখানে যেতেই বাতাসে ভেসে আসে পোড়া গন্ধ। আগুনে ওই ফ্লোরে থাকা সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।
এদিকে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। আগুন থেকে বাঁচতে শিশু রোগীদের নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন সবাই। এক পর্যায়ে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে আসেন।
হাসপাতালের চতুর্থ তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল গৃহবধূ হাজিরা আক্তারের ১৫ মাসের শিশু হাবিবুর রহমান। আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত তাকে নিয়ে নিচে নেমে যান হাজিরা।
হাজিরা আক্তার বলেন, “এক সপ্তাহ আগে আমার শিশুকে নিয়ে এ হাসপাতালে নিয়ে আসি। প্রচণ্ড জ্বর আক্রান্ত ছিল সে। আজ দুপুরের দিকে হঠাৎ হাসপাতালে মানুষের দৌড়াদৌড়ি লক্ষ্য করি। এর কিছুক্ষণ পরই দেখি কালো ধোঁয়ায় পুরো ভবন আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এর মাঝে কয়েকজন আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। পরে দ্রুত আমার শিশুকে নিয়ে নিচে নেমে যাই।”
হাজিরা আরও বলেন, “এখানে আছি প্রায় দুই ঘণ্টা হয়ে গেছে। এমনিতেই বাইরে ব্যাপক গরম। সহ্য করতে না পেরে আমার বাচ্চা শুধু কান্নাকাটি করছে। উপরে সবকিছু কখন ঠিক হবে বুঝতে পারছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে তো আমার বাচ্চা আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।”
ডায়রিয়ার কারণে গত সাত দিন ধরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে ভর্তি ছিল পাঁচ মাসের শিশু আয়াত। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) তাকে আইসিউ থেকে চতুর্থ তলার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আয়াতের মা নীলা কোনো রকমে তার শিশু বাচ্চাকে নিয়ে নিচে নামেন।
নীলা বলেন, “হঠাৎ দৌড়াদৌড়ি আর ধোঁয়া দেখে ভয় পেয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসি। আমার বাচ্চাটা এক সপ্তাহ আইসিইউতে ছিল, সে এখনো পুরপুরি সুস্থ হয়নি। তাকে নিয়ে এই গরমে বাইরে আছি। আবার অসুস্থ হয়ে যায় কি না সেই ভয়ে আছি এখন।”
নীলা বলেন, “তবে পাঁচতলার আইসিইউতে যেসব বাচ্চা ছিল তাদের সমস্যা হয়েছে। অনেক বাচ্চা আছে যাদের অক্সিজেন ছাড়া নিচে নামানো হয়। তারা এখন কোথায় আছে জানি না। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল।”
আগুন নিয়ন্ত্রণ শেষে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, “দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর আমাদের ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালায়। তবে আমরা কোনো ভুক্তভোগীকে পাইনি। আগুন লাগার পরপরই আইসিইউতে থাকা সবাইকে সরিয়ে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনরা।”
আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ধারণা করছি আইসিইউর ভেতরে এসি ছিল। সেটা থেকে হয়ত আগুন লেগেছে। তবে তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।”