• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জুতার জোড়া ২০০০-৮০০০, গরুর চামড়া ২০০-৮০০


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৪, ০৪:৫১ পিএম
জুতার জোড়া ২০০০-৮০০০, গরুর চামড়া ২০০-৮০০
ছবি : সংগৃহীত

পরিবেশবান্ধব ও টেকসই হওয়ায় বিশ্বজুড়ে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বেড়ে চলেছে। ফলে গত এক দশকে দেশে চামড়াজাত পণ্যের দাম কয়েক গুণ বাড়লেও ঠিক উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে কাঁচা চামড়ার ক্ষেত্রে। বিশ্ববাজারে অত্যন্ত দামি বিবেচিত হলেও বাংলাদেশে অনেকটা অবহেলা আর উপেক্ষার শিকার কাঁচা চামড়া। গত এক দশকে দাম নেমেছে অর্ধেকের বেশি।
এবারের কোরবানির ঈদে বড় গরুর চামড়াও কোথাও কোথাও ২০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এমনকি বিক্রি করতে না পেরে অনেকে চামড়া ফেলেও দিয়েছে। অথচ একটি মাঝারি মানের গরুর চামড়া দিয়ে অন্তত ১০ জোড়া জুতা তৈরি হয়। ভালো ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে যার একেক জোড়ার দাম দুই হাজার থেকে আট হাজার টাকা বা আরও বেশি মূল্য দেওয়া আছে।
যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চামড়াজাত পণ্য তৈরিতে প্রধান উপকরণ চামড়া হলেও এর সঙ্গে আরও অন্তত ১০ থেকে ১২ ধরনের কাঁচামাল প্রয়োজন হয়। যেগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করে আনতে হয়। একই সঙ্গে যুক্ত হয় শোরুম ভাড়া, শ্রমিক ও বিক্রয়কর্মীদের মজুরি, পরিবহন খরচ এবং সর্বোপরি ব্র্যান্ড ভ্যালু। ফলে এক জোড়া জুতা তৈরির পর দাম হয়ে যায় দুই থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর ফার্মগেটে এপেক্স কম্পানির শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, তারা সর্বনিম্ন দুই হাজার ২৯০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকার জুতাও বিক্রি করছে। তবে বাংলাদেশে তৈরি জুতা সর্বোচ্চ আট হাজার টাকার মধ্যে। বেল্ট বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৯৯০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৪৯০ টাকা। এই শোরুমের বিক্রয়কর্মী রনি বলেন, ‘আমাদের এখানে সব জুতাই বাংলাদেশে তৈরি। শুধু ভেঞ্চুরিনি বিদেশ থেকে আমদানি করা, যার দাম ১৪ হাজার ৯৯৯ টাকা।
ঈদে পশু কোরবানির পর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে শুরু হয়েছে চামড়া বেচাকেনার কাজ। কয়েক বছর ধরে চামড়ার চাহিদা ও দাম কমার কারণে এ বছর থেকে লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু এর প্রভাব কাঁচা চামড়া বিক্রিতে পড়েনি বলে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে এসব গরুর চামড়া সংগ্রহ করেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা।

এখনো কেন কেউ কেউ ঢাকার হাতে তৈরি জুতা পরতে পছন্দ করেন | The Business  Standard
রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে ১০০ পিস চামড়া নিয়ে পোস্তা এলাকায় এসেছিলেন ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন।
তবে পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে তাদের বাড়তি খরচ হওয়ায় তারা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের খুব একটা দাম দিতে পারছেন না।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, “প্রতি পিস চামড়া লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে তাদের খরচ হচ্ছে ২৭০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত।”
পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীদের যুক্তি কাঁচা চামড়া কেনার পর তার পেছনে যে খরচ হয় সেই খরচ মেটাতে গিয়ে তারা গত বারের চেয়ে বাড়তি দাম দিতে পারছেন না।
রাজধানীজুড়ে যেসব পশু কোরবানি হয় তার একটা বড় অংশ বিক্রি হয় পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায়। কোরবানির দিন দুপুরের পর থেকে এই এলাকায় আসতে শুরু করে পশুর চামড়া।
সাভারের হেমায়েতপুরে তৈরি হয়েছে আরেকটি ট্যানারি সমিতি। গত কয়েক বছরে সেখানেও বেড়েছে বেচাকেনা।
সোমবার (১৭ জুন) বিকেলে রাজধানীর পোস্তায় প্রতি গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আবার ছোট গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর খাসির চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা দরে।
চলতি বছর কোরবানির সময় ১ লাখ ৬০ হাজার পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন রাজধানীর পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকার আড়তদারেরা।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী ইকবাল শেখ ৫০ পিস গরুর চামড়া বিক্রি করতে এসেছিলেন পোস্তা এলাকায়।
পোস্তার আড়তদাররা বেশি দাম চামড়া দিয়ে চামড়া কিনতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলেও তার কাছে মনে হয়েছে। রাজধানীর চামড়ার বাজারগুলোতে ঈদের দিন দেখা কম দামেই কাঁচা চামড়া বিক্রি হতে দেখা গেছে।
৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় যে গরু কেনা হয়েছে সেসব গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছিল গড়ে ৫০০ টাকা দরে। ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছিল ৮০০ টাকা দরে। আর তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরুর চামড়ার দাম সর্বোচ্চ দেখা গেছে সাড়ে ৯০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা দরে।
ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণ যুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণ যুক্ত চামড়ার দাম ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সে হিসেবে ঢাকায় মাঝারি আকারের ২৫ বর্গফুটের লবণ যুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৩৭৫ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এই হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২৫০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ১২৫ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা। সূত্র : বিবিসি বাংলা

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!