আমেরিকার ভিসা নীতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বাপের বেটির’ ভূমিকা রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, “উনারা (আমেরিকা) এখন কী বলে এটা-সেটা ভিসা নীতির কথা। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী এবং আদর্শের উত্তরাধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কী কইছে? তুমি (আমেরিকা) স্যাংশনস দিলে, আমিও স্যাংশনস দেবো, আমার জনগণ দেবে। এরপর আর কোনো কথা থাকে?”
বাংলাদেশের জনগণের আমেরিকায় যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “বিদেশি কোনো প্রভুর কথায় রাষ্ট্র চলবে না। আর আমেরিকা যাওয়া লাগবে কেন? আমাদের কোনো দরকার নেই। আমাদের সাবেক চিফ জাস্টিস ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘আমি কখনো আমেরিকান ভিসা নেইনি, নেওয়ার কখনো প্রয়োজনও নেই।’”
মোজাম্মেল হক বলেন, “যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ছিল তারা আমাদের আশপাশেই আছে। ওরা আজকে আবার আমাদের স্বাধীনতার পতাকাকে খামচে ধরতে চায়। যে কারণে আজকে আমরা শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিনের মতো ত্যাগী শহীদ নেতাদের অভাব অনুভব করি। আর যারা আমাদের স্বাধীনতার পতাকাকে খামচে ধরতে চায়, দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় তাদের মোকাবিলা করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।”
আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ছিল উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, “আমেরিকা একাত্তরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের জন্য সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ঠেকানোর জন্য। আর আমার মনে আছে ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে আমেরিকার প্রতিনিধি বলেছিল ‘সিজ ফায়ার’। তার মানে যুদ্ধ থামিয়ে যে যার অবস্থানে থাকা। আর এটা যদি আমরা মেনে নিতাম অথবা জাতিসংঘে এটা পাস হতো তাহলে আমরা ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা পেতাম না, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করত না।”
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু যখন জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিলেন তখন আমেরিকার প্রতিনিধি দল বলেছিলেন, বাংলাদেশকে যদি সদস্যপদ দেওয়া হয় তাহলে এটা পুরো পৃথিবীর জন্য স্থায়ী একটা বোঝা হবে। এর আগে হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বটমলেস বাস্কেটও বলেছিল।”
৭৪ সালে আমেরিকার জন্য বাংলাদেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ হয়েছিল উল্লেখ করে মোজাম্মল হক বলেন, “১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু নগদ পয়সা দিয়ে আমেরিকা থেকে চাল আর গম কিনেছিল। সেই চাল আর গম চট্টগ্রামের সমুদ্র বন্দরে এসে পৌঁছায়নি, মাঝপথ থেকে উধাও। তার ফলে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষেরও অন্যতম কারণ এটা।”
শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিনের ৩৯তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে গণতন্ত্র এবং উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে শান্তি, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জননেতাদের ভূমিকা- শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে শহীদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন স্মৃতি সংসদ।
সংগঠনের সভাপতি শহীদ ময়েজউদ্দিনের মেয়ে ও বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল বাতেন, তাতী লীগের সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র নাথ দেবনাথ ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মানিক লাল ঘোষ।