• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেখ হাসিনাকে ডুবিয়েছেন যে চারজন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৪, ০৯:৩৫ পিএম
শেখ হাসিনাকে ডুবিয়েছেন যে চারজন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ফটো

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এভাবে দেশ থেকে চলে যাওয়ায় সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। প্রাণ ভয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক নেতাকর্মী। আত্মগোপনে থাকা এসব নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েকজন ও সাবেক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সদস্যদের পাঠানো কিছু বার্তা পেয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সংবাদমাধ্যমটি গত এক সপ্তাহে এসব ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। দেখা করেছে অপ্রকাশিত বিভিন্ন স্থানে।

এ সময় আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “শেখ হাসিনার পতনের ক্ষেত্রে চারজন ব্যক্তি দায়ী। গোষ্ঠীটি শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা বুঝতে দেননি।”  

তারা হলেন, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

নেতারা বলেন, “চারজনের এই দল তার (হাসিনা) পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিদের ওপর তার ছিল অন্ধবিশ্বাস। তার যে সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল, তা তিনি তাদের কারণে হারিয়েছেন।”

নেতাকর্মীদের পরিত্যাগ করে শেখ হাসিনার চলে যাওয়ার একই অনুভূতি শেয়ার করছেন আরও অনেকে। ৫ আগস্টের ঘটনাবলি তারা আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি। সেদিন শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ভারতে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত তার মন্ত্রিসভার সদস্য, এমনকি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও ‘পুরোপুরি বিস্মিত’ করেছে।  

এক নেতা বলেন, “আমরা টেলিভিশনের খবর থেকে এটা জানতে পারি।”

বিপদে নেতাকর্মীদের জীবন
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ‘বিক্ষোভকারী, বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর কর্মী এবং সুযোগসন্ধানীরা’ আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়গুলো নিশানা বানান। এসব স্থানে অগ্নিসংযোগ, লুট ও ভাঙচুর চালানো হয়।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, “৫ আগস্ট শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর সেনাপ্রধান যখন বিকেল ৩টার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তখন আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। কারণ ওই সময়ে মানুষজন টেলিভিশনের পর্দায় নজর রাখছিলেন।

আরেক নেতা ও সাবেক সরকারের মন্ত্রী বলেন, “আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ধরা পড়লে লোকজন আমাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারতেন।”

আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনার সরকারবিরোধী দলের নেতাদের টার্গেট করে, কারাগারে পাঠায়, মারধর করে, ভয়ভীতি দেখায় ও হয়রানি করে। কিন্তু পরে হঠাৎই পরিস্থিতি উল্টে যায়।

বিএনপিকে নির্বাচনে না আনা ‘বড় ভুল’
এ বছরের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপিকে না আনা শেখ হাসিনার একটি ‘বড় ভুল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা।

সূত্রগুলো বলেছে, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে লন্ডনে বিএনপির চেয়ারপারসন তারকে রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।

একটি সূত্রের ভাষ্যমতে, আড়ালে থাকা একটি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রস্তাবও দেওয়া হয় (বিএনপিকে নির্বাচনে আনার)। আমাদের ধারণা, তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় চ্যানেলটি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের এক বছর আগেই ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়...কিন্তু শেখ হাসিনা ওই প্রস্তাবে সবুজসংকেত দেননি।

আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন, “দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, পুলিশের নিষ্ঠুরতায় জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা বুঝছিলাম। বিএনপিকে নির্বাচনী তরিতে ওঠানো গেলে সেই ক্ষোভ হয়তো থামানোও যেত। তাতে আমরাই আবার জিততে পারতাম এবং দল ক্ষমতায় থাকত।”

নেতাকর্মীরা মনে করেন, জানুয়ারিতে নির্বাচনে জয় লাভের পর শেখ হাসিনা আরও একগুঁয়ে হয়ে ওঠেন। ফলে তিনি কোটা সংস্কার নিয়ে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে সৃষ্ট ক্ষোভের মাত্রা বুঝতে ব্যর্থ হন।

শেখ হাসিনার পতনের পর জীবনাশঙ্কায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবী দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেন। আশ্রয় নেওয়া এই ৬২৬ জনের মধ্যে ছিলেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা, ৫ জন বিচারক, বেসামরিক প্রশাসনের ১৯ কর্মকর্তা, ২৮ পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন পদের ৪৮৭ জন পুলিশ সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ নানা পেশার ১২ জন ও ৫১টি পরিবার।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগবিরোধী মনোভাব বিরাজ করায় শেখ হাসিনার পরিবার ও এর উত্তরসূরি সজীব ওয়াজেদ জয়ের খুব কম বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া উচিত বলে মনে করেন দলটির নেতারা।

আওয়ামী লীগের নেতাদের একজন বলেন, “লোকজন এখনো ক্ষেপে আছেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সময় দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বা বিএনপি কিংবা জামায়াতের নেতৃত্বাধীন সরকার যে–ই কয়েকটা বছর ক্ষমতায় থাকুক, আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা আছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের আবার সংগঠিত হওয়ার কথা ভাবতে হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ভারতে রয়েছেন।

Link copied!