• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেখ হাসিনা পালালেও সংকট কাটেনি : মির্জা ফখরুল


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম
শেখ হাসিনা পালালেও সংকট কাটেনি : মির্জা ফখরুল

বিগত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও সংকট কাটেনি। 

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হান্নান শাহ্ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেলেও এখনও সংকট কাটেনি। যেই সরকার এসেছে, এটা অন্তবর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে। মানুষ বিশ্বাস করে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে একটি পার্লামেন্ট গঠন করবে এই সরকার। সেই পার্লামেন্টের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে। তারাও কমিটেড। আমরা বিশ্বাস করি তাদের কথায়, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।”

তিনি বলেন, “দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। নির্বাচন বলতে কিচ্ছু ছিল না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বলুন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বলুন, আর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বলুন, তারা তাদের প্রার্থীদের নির্বাচিত করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে (পুলিশ ও প্রশাসনকে) ব্যবহার করেছে। জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, অর্থনৈতি ব্যবস্থা সবকিছুই তারা কুক্ষিগত করে রেখেছে।”

ফখরুল আরও বলেন, “বিগত বছরগুলোতে তারা বাংলাদেশে দুর্নীতির নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত করে গেছে। শেখ হাসিনা সরকার ধরে নিয়েছিল সে কোনো দিন যাবে না। সে সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবে এবং এইভাবে মানুষকে অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন করে তাদের ক্ষমতাকে চূড়ান্ত করবে এবং সম্পদের পাহাড় গড়বে দেশ-বিদেশে।”

তিনি বলেন, “আজকে খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন তাদের মন্ত্রী-এমপিরা কত টাকা বিদেশে পাচার করেছে। একটার পর একটা মন্ত্রী ধরা পড়ছে। আল্লাহর বিধান, যারা একদিন আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিল, তাদেরই আজকে দুর্নীতি ও চুরির দায়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ তাদের কারাগারে পাঠাচ্ছে। শেখ হাসিনা বড় গলায় বলেছিল আমি পালাব না, শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে আমি পালাতে জানি না। সেই শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার উত্তাল তরঙ্গের সুনামি যখন আসতে শুরু করেছে তখন অতি দ্রুত গণভবন থেকে হেলিকপ্টার নিয়ে পালিয়ে চলে গেছে। এর জন্য অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।”

হান্নান শাহের সঙ্গে জেলে থাকার স্মৃতি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “হান্নান শাহ ছিলেন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক মানুষ। সেনাবাহিনীর পোশাক ছিল। ব্রিগেডিয়ার ছিলেন। মনের দিক দিয়ে ছিলেন গণতান্ত্রিক। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন।”

তার ভাষ্য, “গত ১৭ বছরে বিএনপির প্রায় এক হাজার লোককে গুম করেছে। হাজার হাজার লোককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। নির্যাতনে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারত না। নেতাকর্মীরা আদালতে হাজিরা দিতে যায়, পুলিশ টাকা চায়, টাকা না দিতে পারলে ধরে নিয়ে যায়, মামলা দেয়। আমাদের নেতা হান্নান শাহ মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন একাধিকবার। তারা পালিয়ে গিয়েও যড়যন্ত্র করছে। গাজীপুরে পোশাক কারখানা বন্ধ করার জন্য যড়যন্ত্র করছে। আমাদের শ্রমিক ও মালিক ভাইয়েরা আলোচনা করে পোশাক কারখানা খুলেছে।”

তিনি আরও বলেন, “দুর্গাপূজা আসছে। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। হিন্দু ভাইদের বলতে চাই, আপনারা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। আপনারা যেভাবে আছেন আমরা সব সময় অপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের পূজার ব্যাপারে এই নিশ্চয়তা দিতে পারি বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়াবে এবং আপনাদের পূজা নিয়ে যেন ব্যাঘাত ঘটতে না পারে, তার জন্য বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।”

সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান রতন, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, বেনজির আহমেদ টিটু, ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক এমএ কাইয়ুম, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও হান্নান শাহ্’র ছেলে রিয়াজুল হান্নান, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা প্রমুখ।

Link copied!