আহারে শামীম ভাই অফিসে ঢুকে দেখি আপনার ডেস্কটা খালি। কীভাবে আপনাকে নিয়ে লিখব? আপনার সঙ্গে যে কত স্মৃতি। এই তো সেদিন আপনি একটি কলাম লিখে বললেন, “রাসেল এইটা একবার দেখে তুলে দিও”। একটা ছবিও দিলেন। বললাম, “ভাই আপনার ছবিটাতো অনেক আগের, আসেন একটা ছবি তুলে দিই”। এরপর কয়েকটা ছবি তোলার পর বললেন, “বাহ্ তুমি তো ভালো ছবি তোলো। এই ছবি দেখলে তোমার ভাবী খুশি হবে, আবার রাগও করবে।” আমি বললাম, “কেন ভাই, রাগ করবে কেন?” আপনি বললেন, “তোমার ভাবী বলবে, তুমি এত সুন্দর করে বাসায় হাসো না।”
আহারে শামীম ভাই, আপনি আমাকে কতভাবে কত কিছু বুঝিয়েছেন, কত কথা বলেছেন, এদের এড়িয়ে চলবা, এদের সঙ্গে মিশবা না, এদের ফাঁদে পড়বা না। কে জানতো আপনি এভাবে আমাদের সুন্দর ভবিষ্যতের পথ দেখিয়ে নিজেই আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন।
বুধবারও (১৭ জানুয়ারি) একসঙ্গে অফিস করলাম। সেদিন মিটিংয়ে আপনি বেশ অসুস্থ ছিলেন। আর ওইদিনই ছিল আপনার সঙ্গে আমার শেষ দেখা। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ডে-অফ কাটানোর পর শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) অফিসে আসলাম। এদিন আপনার ডে-অফ।
প্রায় সময়ই ডে-অফের দিন সন্ধ্যার দিকে আপনি ফোন করে নিউজ সম্পর্কে জানতে চাইতেন। প্রতিনিধিদের নতুন কোনো অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া যায় কি না বলতেন। তবে এবারের শুক্রবারের ডে-অফটা ছিল ভিন্ন। অফিস আওয়ার শেষ, আপনার ফোন আসেনি। ফোন করব ভেবেও করা হলো না। ডিউটি শেষে বেরিয়ে রওনা হলাম বাসার উদ্দেশ্যে। রাত সোয়া ১১টার দিকে সাবেক সহকর্মী মেজবার ফোন এলো। “ভাই শামীম ভাই নাকি মারা গেছেন?”
কথাটা শোনা মাত্র মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। ফোন কেটে সঙ্গে সঙ্গে প্রণব দাকে কল করলাম। কিন্তু পাচ্ছিলাম না। মামুন ভাইকে কল করলাম। ফোন রিসিভ করেই মামুন ভাই বললেন, “ভাই আমাদের শামীম ভাই আর নাই।”
পরে প্রণব দাকে আবার কল করলাম। রিসিভ হওয়া মাত্র জিজ্ঞেস করলাম, “দাদা একটা ব্যাড নিউজ শুনলাম।” দাদা বললেন, “হ্যাঁ রাসেল, আমি এখন হসপিটালে আছি।” বললাম, “দাদা আমি আসতেছি।” দাদা বললেন, “আসা লাগবে না রাসেল। লাশ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে ফেলছে, কিছুক্ষণের মধ্যে চলে যাবে। আপনি এসে পাবেন না।”
সবকিছু কেমন যেন স্থবির হয়ে গেল। অনেকক্ষণ বাইরে একা একা বসে থেকে পরে বাসার দিকে হাঁটতে লাগলাম। কোনো কিছু ভালো লাগছিল না। বিশ্বাস করতে পারছি না, আপনি আর আমাদের মাঝে নেই। বাসায় কারো সঙ্গে কথা না বলে পিসিটা অন করলাম। এরপর আমাদের সংবাদ প্রকাশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ভিডিওটা প্লে করলাম। কতটা প্রাণবন্তভাবে আপনি গাইছেন, “মা আমার কত কাছে রয়…।”
আহ্ ভাই, আপনার সঙ্গে আর দেখা হবে না। আর আমাদের এভাবে গান শোনাবেন না। আমাকে আর বলবেন না, “রাসেল প্রেম-টেম কইরো না, বয়স হইছে বিয়ে করো।”
এর আগে কোনো হাউজে কাজ করাকালীন আমার কোনো সহকর্মী মারা যায়নি। তবে সহকর্মীরা যে কতটা আপন, সহকর্মীদের জন্য যে কত মায়া সেটা আপনাকে দিয়ে বুঝেছি ভাই। সত্যি আপনার মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। ওপারে ভালো থাকবেন ভাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে জান্নাতবাসী করুক, আমিন।