• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মিজানের কান্নায় থেমে যায় কোলাহল


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩, ০৬:০০ পিএম
মিজানের কান্নায় থেমে যায় কোলাহল
স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় মিজানুর রহমান (মিজান) শাহবাগে মাইকে বিলাপ করছেন। ছবি-সংগৃহীত

স্ত্রী আর সন্তান হারানো এক যুবকের কান্নায় শাহবাগের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। থমকে দাঁড়িয়ে অশ্রু মুছেছিল পথচারিরা। মাইকে বিলাপ করা সেই যুবকের নাম মিজানুর রহমান (মিজান)।

গত ১৯ ডিসেম্বর তেজগাঁওয়ে ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুড়ে মারা যায় তার তিন বছরের ফুটফুটে সন্তান ইয়াসিন ও স্ত্রী নাদিরা। সন্তান আর স্ত্রী হারানোর অসহনীয় বেদনার আর্তনাদের শব্দে থেমে গিয়েছিল শাহবাগের কোলাহল। যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলোতে যাত্রীরাও ছিল নিশ্চুপ। বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় বিচারের দাবিতে শাহবাগে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর চোখ বেয়ে ঝরেছে অশ্রু।

মিজানুর রহমান আর্তনাদ করে বলছেন, আমি জাতির কাছে বিচার দিতে এসেছি- যারা আমার স্ত্রী সন্তানকে পুড়িয়ে মেরেছে, তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। যারা আগুনে মানুষ পোড়াচ্ছে-তাদের বিচার চাই। তার আর্তনাদের ভারি কণ্ঠে এই শব্দগুলো মাঝে মাঝে থেমে যাচ্ছিল।

আগুনের বিভীষিকাতেও কোলের সন্তানকে বুকে আগলে রেখেই মারা যান হতভাগ্য এই মা।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ‘আমরাই বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদী পদযাত্রা শেষে শাহবাগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিচারের দাবিতে এভাবেই আর্তনাদ করে মিজান।

মিজান বলেন “যে সন্তানকে সাজিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছিলাম, তাকে আর কোলে নিতে পারি নাই। লাশ কোলে নিয়ে বাড়ি যেতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি বিচার দাবি করি। যারা আমার জীবনকে এলোমেলা করে দিয়েছে তাদের বিচার করবেন। আমার স্ত্রী সন্তানের  কী দোষ ছিল? প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার দাবি-তাদের যেন বিচার হয়।”

প্রসঙ্গত, গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধের প্রথম সকালে (ভোরে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা যান মিজানের স্ত্রী নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তিন বছরের ফুটফুটে শিশু ইয়াসিন।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তথ্যে জানা যায়, বগিতে আগুন লাগলে বিভীষিকাময় মুহুর্তেও সন্তানকে বুকে আগলে রেখেছিলেন মা নাদিরা আক্তার। মরদেহ উদ্ধারের সময়ও শিশুটি তার কোলেই ছিল।

‘আমরাই বাংলাদেশ’ এর আয়োজনে এই পদযাত্রায় অংশ নেন বিভিন্ন নাশকতায় ভুক্তভোগী ও নিহতদের  অনেক স্বজন।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রাটি এসে শাহবাগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বেসরকারী এক বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষার্থী রেদওয়ানুল হক বলেন, “এই কষ্ট আমার বাবারও হতে পারে যে কোনোদিন। এই বিচার যেন মিজানুর রহমানকে একা চাইতে না হয়, সেজন্য আমরা সবাই এখানে জড়ো হয়েছি। সবাই প্রতিবাদী হলে নাশকতাকারীরা আর তাদের দুঃসাহস দেখাতে পারবে না।”

Link copied!