আগে ভাবা হতো পাহাড়, নদ-নদী, লেক আর সাগরঘেরা সবুজ অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়বে না। লেক আর সাগরের শীতল হাওয়া এসে সবুজঘেরা পাহাড়ি অঞ্চলকে ঠাণ্ডায় ভরিয়ে রাখবে। কিন্তু গত কয়েক দশকে এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বিপজ্জনকহারে বেড়েই চলেছে। সাগরের সেই উষ্ণতা আছড়ে পড়ছে এখন উপকূলীয় শহরগুলোতে। ফলে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।
এমন তথ্য উঠে এসেছে একটি গবেষণা প্রবন্ধে। বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক আয়োজিত এক ওয়েবিনারে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেছেন। সেই গবেষণায় ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দুই দশকের ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একটি অনলাইন পোর্টাল বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় তিন দশক ধরে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। যা উপকূলীয় এলাকায় বাড়িয়ে দিয়েছে তাপপ্রবাহের মাত্রা। যে কারণে পাহাড়, নদী-লেক আর সাগরঘেরা এক সময়ের সবুজ শহর চট্টগ্রামের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। বন্দর নগরীর বার্ষিক গড় তাপমাত্রা গত তিন দশকে বেড়েছে এক দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অন্যদিকে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উষ্ণ বায়ুপ্রবাহের কারণে চট্টগ্রামে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে রাতের তাপমাত্রা। হিসাব করে দেখা গেছে, ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রামে রাতের তাপমাত্রা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। যেখানে ঢাকায় বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চট্টগ্রামে সেখানে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গবেষণায় ডেটা বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, দিনের বেলায় গ্রামের সঙ্গে ঢাকার তাপমাত্রার গড় পার্থক্য হয় ২ দশমিক ৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ সময় চট্টগ্রামের পার্থক্য দাঁড়ায় এক দশমিক ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কিন্তু রাতে ঢাকায় তাপমাত্রার পার্থক্য এক দশমিক ৫৭ ডিগ্রি হলেও চট্টগ্রামে তা এক দশমিক ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশ্লেষণে দেখা যায়, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে দিন ও রাতের তাপমাত্রায় পার্থক্য তেমন নেই।
বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে গবেষণার প্রধান লক্ষ্য ধরা হলেও উপকূলীয় অন্যান্য এলাকার ফলাফলও কাছাকাছি পাওয়া গেছে। ফলে উপকূলীয় এলাকা কক্সবাজার, নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, খুলনা ও সাতক্ষীরায় বেড়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। একই সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের বেড়ে যাওয়া উষ্ণ হাওয়া আছড়ে পড়ছে উপকূল সংলগ্ন এলাকাগুলোতে।