সাম্প্রতিক সময়ে নির্বিচারে প্যারাবন নিধনের প্রতিবাদে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে মানিক মিয়া মিলনায়তনে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে প্রতিবুদ্ধিজীবী ও এডুসেন্ট্রিক।
গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন শাহজাদা মহিউদ্দিন, বিশেষ অতিথি ও আলোচক হিসেবে কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, ভাষাবিদ ড. মোহাম্মদ আবদুল হাই, এডুসেন্ট্রিকের চেয়ারম্যান এম. রেজাউল করিম রেজা, সাংবাদিক মাহবুব কামাল, রাজনৈতিক এক্টিভিস্ট আতাউল্লাহ, সমাজকর্মী জসিম কাতাবি, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন, সমাজ নৃগবেষক নির্বান পাল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইদুল করিম, ঢাকাস্থ মহেশখালী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মুন্সিয়ানার সম্পাদক ও এডুসেন্ট্রিক প্রকাশক মিনহাজ উদ্দিন মিরান, সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কবি মনির ইউসুফ, সম্পাদক, কবিতার রাজপথ। এই মহতি উদ্যোগ ও গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রতিবুদ্ধিজীবীর সম্পাদক সাদাত উল্লাহ খান।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা ভয়াল ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের এবং ক্ষয়ক্ষতি স্মরণ করেন। তারা বলেন, উপকূলীয় এলাকায় বছরের বিভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন, টর্ণেডো সহ নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। এর ফলে ঘরবাড়ি, ফসল ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনে সৃজিত উপকূলীয় প্যারাবন। যেখানে নতুন নতুন বন সৃজন করার কথা, সম্প্রসারিত করার কথা- সেখানে তা ধ্বংস করা হচ্ছে, সংকুচিত করা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, উপকূলীয় বন যে কোন উপায়ে রক্ষা করতে হবে। নইলে উপকূল চরম ঝুঁকির মুখে পড়বে। যেভাবে প্যারাবন নিধন চলছে তাতে আগামী ২০-৩০ বছর পর মহেশখালী থাকবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহপোষন করেন বক্তারা। এই ধ্বংসের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যেকোন মূল্যে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন তারা। বক্তারা বলেন, যে উন্নয়ন বনকে ধ্বংস করে, পাহাড়কে ধ্বংস করে সে উন্নয়ন চাই না। আমরা চাই প্রকৃতি বান্ধব উন্নয়ন।
দেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশী। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের এই ঘূর্ণিঝড়ে কেউ কেউ বাবা, মা আবার কেউ কেউ ভাই বোনসহ স্বজনদের হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিল।
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়টি ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ছয় মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয় এবং এতে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এদের বেশিরভাগই নিহত হয় চট্টগ্রাম জেলার উপকূল ও দ্বীপসমূহে। সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতিয়া দ্বীপে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক। শুধু সন্দ্বীপেই মারা যায় প্রায় ২৩ হাজার লোক।