• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তীব্র পানির সঙ্কটে রায়েরবাজার, চরম দুর্ভোগে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী


খাদিজা নিপা
প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৩, ১০:০৮ পিএম

প্রায় ১০ দিন ধরে পানির তীব্র সংকটে ভুগছে রাজধানীর রায়েরবাজারের এলাকাবাসী। রায়েরবাজারের হাশেম খান রোড, নিমতলি, টালি অফিস এলাকায় এই সঙ্কট তীব্রতর। বিশেষ করে রায়ের বাজারের পশ্চিম পাশে আবাসিক এলাকায়— হজরত ওমর গলির চিত্র ভয়াবহ। ফলে ওই এলাকার মানুষেরা আশেপাশের এলাকা থেকে পানি নিয়ে কাজ সারছে। কেউ কেউ দোকান থেকে বোতলজাত পানি কিনে ব্যবহার করছে। 
জানা গেছে, ওই এলাকায় পানির এই সঙ্কট চলছে প্রায় দুই বছর ধরে। তবে সম্প্রতি সেই সঙ্কট তীব্রতর হয়েছে। দুর্বিসহ এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা করেও কোনো সুরাহা মিলছে না এলাকাবাসীর। অন্যদিকে সমস্যা সমাধানে ওয়াসা কর্তৃপক্ষও সুষ্ঠু কোনো কারণ জানাতে পারছে না। এ থেকে কবে মুক্তি মিলবে, সেটাও জানাতে পারছে কেউ।

স্থানীয় এক বাসিন্দা সংবাদ প্রকাশকে জানান, গত দুই বছর ধরে পানির সংকটে ভুগলেও গত ১০ দিন ধরে সেই সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে সারা দিনে পানি নেই। পানি কিনে রান্না ও খাওয়ার কাজ করি। কিন্তু টয়লেট-গোসলের পানির জন্য রাত জেগে বসে থাকি কখন পানি আসবে? বাচ্চারা তো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। বারবার বাড়িওয়ালার কাছে গেলেও পানি পাচ্ছি না।” 

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তায় এক বয়স্ক নারীর হাতে পানির জার। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “যে বাসায় কাজ করি সেখান থেকে পানি নিয়ে আসছি খাওয়ার জন্য। প্রতিদিন পানি কেনার টাকা কই পাব? সেখানে গোসল করে খাওয়া আর রান্নার পানি আনি।” 

এসময় আরেকজন তার সঙ্গে যুক্ত করে বলেন, “অন্যের বাসায় তো বার বার যাওয়া যায় না। কষ্ট করেই চলতে হচ্ছে।” 

পানির এই সংকট কেন?— এমন প্রশ্নের উত্তরে আমির হোসেন নামে এক বাড়িওয়ালা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ট্যাঙ্ক খালি, পানি নেই। ওয়াসার থেকে রাতে একটু পানি দেয়, সেটাও খুব অল্প। সারা রাত পানি তোলার মটর ছেড়ে রাখি। তারপরও প্রতিটা ফ্ল্যাটে এক বালতি করে পানি দেওয়া হয় না। অথচ ওয়াসাকে আমরা সবসময় পানির বিল সময় মতো দিয়ে দিই। তবুও ঠিকঠাক পানি দেয় না তারা। এভাবে মটর ছেড়ে রাখার কারণে মটরও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”  

ওয়াসার সাথে যোগাযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে সেখানকার এক বাসিন্দা শ্লেষের সঙ্গে বলেন, “গত বছর একটা দরখাস্ত করি ওয়াসা বরাবর। তারা বলেছিল, সমস্যা সমাধান করতে এলাকায় এসে দেখবে। কিন্তু এখনো তাদের দেখার সময় হয়নি।”

পাশে দাঁড়ানো অপর এক বাসিন্দা বলেন, “স্থানীয় ওয়াসা অফিসে তো প্রায় প্রতিদিনই যাই। তারা বলে, আপনারা জায়গা দেন, সেখানে পাম্প বসাবো। কিন্তু জায়গা আমরা কেন দেবো? আমরা টেক্স দিই, পানির বিল দিই। জায়গা দেবো কেন? কোথা থেকেই-বা দেবো?”

এ ব্যাপারে নিমতলি এলাকায় অবস্থিত ওয়াসার স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করা হলে সংবাদ প্রকাশের ক্যামেরা দেখে সেখানে দায়িত্বে থাকা কর্মচারী বিষয়টি এড়াতে সটকে পড়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে দায়সারাভাবে বলেন, “আমার ডিউটি আওয়ার শেষ। এখন অন্য আরেকজন আসবে।”

সেই অন্য আরেকজন কোথায়?— সেটা জানতে চাইলে বলেন, “পাশের এলাকায় আরেকটা পাম্প আছে, সেখানে কাজ করছে। তাদের একজনকেই দুইটা পাম্প দেখতে হয়। তাই এখন তাকে পাওয়া যাবে না।” এ কথা বলে প্রায় ছুটে পালিয়ে যান ওয়াসার ওই কর্মচারী।

এ বিষয়ে ৩৪ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার দায়িত্বে থাকা বাসিন্দারা পানি পাচ্ছে না, এ কথাটি প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরে বলেন, “এখানে পানির পাম্প নেই। পাম্পগুলো অন্য এলাকায় হয়ে যাওয়াতে এবং  মানুষের তুলনায় পাম্প অপ্রতুল বলে এই এলাকার বাসিন্দারা কম পানি পাচ্ছে। তবে ওই এলাকার জন্য আমরা একটা পাম্পের জায়গা ঠিক করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডও সেটার অনুমোদন দিয়েছে। সম্ভবত মাস দুই-একের মধ্যে পাম্পের কাজ শুরু হবে।”

এই দীর্ঘ সময় এলাকার বাসিন্দারা কী করবেন?—এমন প্রশ্নের উত্তরে কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন বলেন, “ভালো কিছু পেতে হলে তো একটু ধৈর্য ধরতেই হবে, অপেক্ষা করতে হবে।”

Link copied!