মেট্রোরেল নির্মাণের সময় রাজধানীর ফার্মগেটে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি বিজড়িত শহিদ আনোয়ারা উদ্যান সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। সে সময় কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, মেট্রোরেল নির্মাণ শেষে উদ্যানটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হবে। একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রও।
তবে মেট্রোরেল নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর গত কয়েক মাসেও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ উদ্যানটি ফেরত দেয়নি। বরং উদ্যানের স্থানে শপিংমল তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যাতে ঢাকার পরিবেশ তথা দেশের পরিবেশে রক্ষায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
শহিদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষার দাবিতে শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ফার্মগেটে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে এসব কথা বলেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতারা। তারা ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক শহিদ আনোয়ারা উদ্যান ফেরত চাই’ ব্যানারে সংহতি সমাবেশ পালন করেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সে (বিআইপি) সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, মানবাধিকার কর্মী শিরিন হক, শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা রুস্তম আলী, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষা কমিটির নেতা রকিবুল রনি প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “মেট্রোরেল কথা দিয়েছিল তাদের নির্মাণ কাজ শেষ হলে পার্ক ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু এখন পার্ক ফিরিয়ে না দিয়ে তারা শপিংমল নির্মাণ করতে চাইছে। তারা সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস ভঙ্গ করছে। এই শহরে এর আগেও খেলার মাঠ, প্রকৃতি নষ্ট করে নগরায়ন হয়েছে। আমরা বলব, এগুলো নগরায়ন বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড।
বক্তারা বলেন, “একটি নগরে ২৫ ভাগ সবুজ প্রকৃতি থাকা দরকার। কিন্তু ঢাকা মহানগরীতে তা নেই। আছে মাত্র ৬ শতাংশ। সেটিও খাতা কলমে। ফার্মগেট অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। এখানে বসার জায়গা নেই। সেখানে পার্কের বদলে শপিংমল নির্মাণ পরিকল্পনা একেবারেই আত্মঘাতী।” মেট্রোরেলের এমন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা জনগণের পার্ক জনগণকে দ্রুত ফেরত দিতে বলেন।
বক্তরা আরও বলেন, “তীব্র দাবদাহের দুঃসহ যন্ত্রণা আমরা ভুলিনি। গাছ, উদ্যান আর জলাভূমির গুরুত্ব সবাই বুঝেছি। তারপরও দেখি, দেশজুড়ে উন্নয়নের নামে প্রতিদিন গাছের ওপর কোপ পড়ছে। বনভূমি, নদী, পাহাড়, জলাশয়, সবুজ বলয় নিরাপদে নেই। এমনকি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি বিজড়িত ফার্মগেটের ঐতিহাসিক শহিদ আনোয়ারা উদ্যান কিংবা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সবখানে উন্নয়নের নির্দয় আঘাত লেগেছে। যাতে আমরা ক্রমাগত পরিবেশ ও ইতিহাস বিমুখ হয়ে উঠছি। এরকম পরিস্থিতি সুস্থ সংবেদনশীল নতুন প্রজন্মের জন্য হুমকি।”
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, মেট্রোরেলের কারণে শহিদ আনোয়ারা উদ্যানের গাছ কেটে পুরো উদ্যান দখল নেয়া হয়েছে। আমরা নগরবাসী, পাখপাখালিসহ সবার জন্য উদ্যানটি ফেরত চাই। একইসঙ্গে পান্থকুঞ্জ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ সব উদ্যানের বৃক্ষ ও প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই। প্রাণ-প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন চাই।
বক্তারা দাবি জানিয়ে বলেন, অতিসত্বর ফার্মগেট শহিদ আনোয়ারা উদ্যান থেকে মেট্রোরেলের সব সরঞ্জাম সরানো হোক। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে এই উদ্যানে দেশীয় বৃক্ষ রোপণ, প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষাকল্পে যথাযথভাবে সবুজ ও নির্মল করার দায়দায়িত্ব নিতে হবে। সমাবেশ থেকে আলটিমেটাম দিয়ে বক্তারা বলেন, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মেট্রোরেলের সব সরঞ্জাম না সরালে কঠোর আন্দোলন শুরু হবে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক ফোন রিভিস না করে কেটে দেন। পরে তাকে মোবাইল ফোনে এসএমএস দেয়া হলেও সাড়া দেননি।