বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিত গণত্রাণ সংগ্রহ চলমান থাকলেও সেখানে এবার তা পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠ সংলগ্ন জিমনেশিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে।
শনিবার (২৪ আগস্ট) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে এক ভিডিও বার্তায় এমন ঘোষণা দেন সমন্বয়ক এম এ সাঈদ।
চলমান গণত্রাণ কর্মসূচিতে শুধু শনিবার নগদ ১ কোটি ৮৬ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ও শনিবার মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে ৪৯ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।
শনিবার রাত সোয়া ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সমন্বয়ক সানজিনা আফিফা অদিতি।
তিনি বলেন, “এখনও কিছু টাকা গোনা বাকি আছে। আজকের যে সংগৃহীত নগদ অর্থ সেটির কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। আশা করি সবমিলিয়ে আড়াই কোটি টাকার আশেপাশে হবে।”
এদিকে শুক্রবার নগদ অর্থ ও ব্যাংকিং মাধ্যম থেকে মোট অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা। এর আগে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে ১৪ লক্ষ ৬০ হাজার ১৭৩ টাকা সংগ্রহ করা হয়।
বন্যাদুর্গত এলাকায় সহায়তা করতে মোট ৫০ ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যদিও এখনও ত্রাণ পাঠানো কার্যক্রমের প্রক্রিয়া চলমান।
সমন্বয়ক রেজওয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, “ইতোমধ্যে বন্যার্ত এলাকায় ৫০ এর অধিক ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী গিয়েছে। যেখানে ১ হাজার থেকে ১২শ খাবার, পানীয় এবং অন্যান্য সামগ্রী আমরা সরবরাহ করেছি। আজও বেশ কয়েকটি ট্রাক বন্যা দুর্গত এলাকার উদ্দেশ্যে ছাড়বে। এছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় আমরা এয়ার লিফটিংয়ের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছি।”
যুক্ত হচ্ছে নতুন কর্মসূচি
সংবাদ সম্মেলনে চলমান রেসকিউ অপারেশন ও ত্রাণ বিতরণতে বেশকিছু নতুন কর্মসূচি যুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার।
তিনি বলেন, “রোববার থেকে বন্যা দুর্গত এলাকায় ১০ থেকে ১২ জন ডাক্তার যাবেন, সেখানে নির্দিষ্ট কিছু বুথে তারা চিকিৎসা সেবা দেবেন। ওষুধ সরবরাহের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া শুকনা খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। সেজন্য রবিবার থেকে গণরান্না কর্মসূচির পরিকল্পনা করছি। মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি আমাদের এই গণরা রান্না কর্মসূচি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সহযোগিতা করবেন। এবং টিএসসি-ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মাঠে যেসব পয়েন্ট রয়েছে, এসব পয়েন্টে চাল-ডাল-তেলসহ প্রয়োজনীয় রান্না সমগ্রী সরবরাহের চেষ্টা করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “সেসব স্পটে রান্না করার পরিবেশ আছে সেইসব এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় আমরা খাবার পাঠানোর চেষ্টা করব। অন্তত চার লাখ মানুষের রান্না করার ব্যবস্থা করা হবে।”
টিএসসির সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ত্রাণ সংগ্রহ
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও পৃথকভাবে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটির (ডিইউআরএস) সদস্য শাহরিয়ার নাজিম সীমান্ত সময়ের আলোকে বলেন, শনিবার আমাদের সংগঠন থেকে বন্যার্তদের জন্য প্রায় ২৩ হাজার টাকা ফান্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্যুরিস্ট সোসাইটি, সাহিত্য সংসদ, ফটোগ্রাফি সোসাইটিসহ আরও টিএসসিভিত্তিক ১৯টি সংগঠনও ত্রাণ সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। সেখান থেকে আমাদের সংগঠনগুলোর সংগৃহীত অর্থ কেন্দ্রীয়ভাবে বানভাসি মানুষদের সহায়তায় কার্যক্রম চালাব।
বিভাগভিত্তিক ত্রাণ সংগ্রহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও পৃথকভাবে বন্যার্তদের সহায়তার জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। এ ছাড়া ত্রাণ সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্পট ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শামস তারেক আজীজ বলেন, আমরা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৬টি টিন গঠন করে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে বন্যাদুর্গতদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছি। দুদিনে আমাদের বিভাগ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো অর্থ সহায়তা সংগ্রহ করা হয়েছে।
‘জরুরি সংযোগ’ এ ত্রাণ উত্তোলন
বানভাসি মানুষের সাহায্যের জন্য ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করতে গত শুক্রবার টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কনসার্টের আয়োজন করা হয়। ‘ভারতের পানি আগ্রাসনে আক্রান্তদের জন্য জরুরি সংযোগ’ শীর্ষক এই কনসার্টে বন্যায় আক্রান্তদের জন্য নগদ অর্থ ও ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়। গান শুনতে আসা মানুষদের অনেকেই ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ তুলে দেন কনসার্টের আয়োজকদের কাছে। মূলত এর আয়োজক ছিল বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো। ‘জরুরি সংযোগ’-এ ৬ ঘণ্টায় ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০৩ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল।
এর পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য প্রায় ২০ ট্রাক সমপরিমাণ ত্রাণসামগ্রী সংগৃহীত হয়েছে। প্যাকেজিং শেষে ত্রাণসামগ্রী দুর্গত এলাকায় পাঠানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ত্রাণ সংগ্রহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকেও বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সংগঠনটি তাদের ত্রাণ সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, “আমাদের সংগঠনের সাবেক নেতৃবৃন্দ ও শুভাকাক্সক্ষীদের কাছ থেকে আমরা বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ সহায়তা সংগ্রহ করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ১২০০ কেজি চাল, ডাল ৩০০ কেজি, পানি ১৪০০ লিটার, শুকনো খাবার, স্যালাইন, ওষুধ ও প্রায় নগদ ৫ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা সংগ্রহ করা হয়েছে।”