দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। আর দুই-চার দিনের মধ্যেই শুরু হবে কর্মজীবী মানুষদের বাড়ি ফেরা। এই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। নৌ-নিরাপত্তা ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঘরমুখো মানুষদের এবারের ঈদ যাত্রা কালবৈশাখী ঝড়ের মৌসুমে হওয়ায় গ্রহণ করা হবে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
বুধবার (৩ এপ্রিল) সরেজমিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে, যাত্রীর চাপ নেই লঞ্চগুলোতে। হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রীকে দেখা গেছে লঞ্চগুলোর ডেকে। যারা অধিকাংশই রাজধানী ঢাকায় এসেছিলেন বিশেষ কোনো কাজে। এসময় দুই একজন যাত্রীকে পাওয়া যায় ঈদকে ঘিরে যারা নিজ জেলায় ফিরছেন। কেবিনের চিত্রও একই রকম। লঞ্চ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা, পদ্মা সেতুর কারণে এ বছরও থাকবে না আশানুরূপ যাত্রীর চাপ।
এদিকে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও লঞ্চ মালিক সমিতি দেওয়া তথ্য মতে, পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চে যাতায়াতকারী যাত্রীদের মধ্যে সব থেকে বেশি কমেছে বরিশালের মানুষদের। পদ্মা সেতুর হওয়ার আগে ১০০-১৫০টি জাহাজ এই বন্দর দিয়ে চলাচল করতো। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৬০টি লঞ্চ সদর ঘাট থেকে চলাচল করছে। এ বছর যাত্রীদের ঈদ যাত্রা শুরু হবে আগামী ৬ এপ্রিল থেকে এবং চলবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত। যদি ঈদের যাত্রীর চাপ জাহাজের তুলনায় বেশি হয় তবে লঞ্চের সংখ্যা বাড়বে।
লঞ্চ যাত্রী শাহীন বলেন, “লঞ্চ যাত্রা বাসের থেকে ভালো লাগে, খোলা মেলা পাওয়া যায়। বাসে কম সময় লাগলেও ক্লান্তি বাড়ে। আগাম বাড়ি যাচ্ছি ছুটি পেয়েছি তাই। পরে চাপ বাড়বে।” সুমি নামের আরেক যাত্রী বলেন, “ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে আসছিলাম। লঞ্চের যাতায়াত ভালো লাগে। বরিশাল রাঙাবালি যাবো। সময় লাগবে ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা। এই লঞ্চে ভালো লাগে।”
এমবি ফারান-১০ নামের একটি লঞ্চের কেবিনের দায়িত্ব থাকা রাসেল মাহামুদ বলেন, “আগামী ৫ থেকে ৬ তারিখের মধ্যে ঈদের বাড়ি ফেরা যাত্রী পাওয়া যাবে। পদ্মা সেতুর কারণে অন্যান্য জেলার মানুষদের যাতায়াত থাকলেও বরিশালের মানুষদের যাতায়াত কমেছে। গতবারের মতো তাই যাত্রী হয়নি, এবারও আহামরি খুব একটা যাত্রী হবে না। বর্তমানে ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রী দুই একজন পাওয়া যাচ্ছে। এসব যাত্রী তারাই যারা পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। বাড়ির কর্তা পরে যাবেন, পরিবার আগে পাঠালেন এসব যাত্রী।”
জাহিদ-৩ নামের আরেক লঞ্চের দায়িত্বশীল মোহাম্মদ রুবেল বলেন, “যাত্রীর চাপ হবে, তবে আগের মতো না। চাপ যা হওয়ার হবে ৭, ৮ ও ৯ তারিখে। পদ্মা সেতুর কারণে বরিশালের মানুষ কমেছে। কারণ বরিশালের মানুষ বাসে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় পৌঁছায় আর লঞ্চে সময় লাগে বেশি।”
বাংলাদেশ লঞ্চ সমিতির সাধারণ সম্পাদক, আব্দুস সালাম খান বলেন, ঈদুল ফিতরকে যাত্রী চাপ তেমন না হলেও সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু হওয়ার আগে এই সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রায় ১৫০টি মতো লঞ্চ ছেড়ে যেতো। এখন তা দৈনিক ৪০-৫০টি জাহাজে নেমে এসেছে। তাছাড়া সদরঘাট এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না। এখানে আসতে হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে (যানজট) পড়তে হয় যাত্রীকে।
ঢাকা নদী বন্দরের (বন্দর ও পরিবহন বিভাগ) উপ-পরিচালক এ কে এম কায়সারুল ইসলাম বলেন, “ঈদকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি বিআইডব্লিউটিএ নিয়ে থাকে। এবারও তার বিকল্প নয়। অনেক আগে থেকেই ঘাট পয়েন্টগুলো সংস্কারের জন্য দপ্তরগুলোকে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। যাত্রীদের সতর্ক করতে লিফলেট বিতরণ করা হবে। দুই একদিনের মধ্যে নৌ-পুলিশ, ডিএমপি, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন, লঞ্চ মালিক সমিতি, যাত্রী পরিবহন সংস্থা সবার সমন্বয়ে একটি বন্দর সমন্বয় কমিটি থাকবে। যারা যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে।”
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, “যাত্রীর চাপ তেমন নেই। তবে গার্মেন্টস ছুটি হলে তখন যাত্রী চাপ বাড়বে হয়তো। পদ্মা সেতুর কারণে বরিশালের যাত্রীদের প্রভাব পড়ছে।”
কালবৈশাখী ঝড়ের মৌসুমে ঈদ ভ্রমণ যাত্রীর বাড়তি নিরাপত্তার জন্য কি ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে দপ্তরটির এই কর্মকর্তা বলেন, “কালবৈশাখী ঝড় কখন আসবে কেউ জানি না। তবে আবহাওয়ার অধিদপ্তর থেকে আবহাওয়ার সংকেত যথাযথভাবে সংগ্রহ করবো। সেসব তথ্য লঞ্চ মালিক সমিতি এবং লঞ্চ মাস্টারদের সঙ্গে নিয়ে যে হোয়াটস্ অ্যাপ গ্রুপ রয়েছে সেখানে পাঠানো হবে।”