বাংলাদেশের মানুষের কাছে আলুর পরেই বেগুন অন্যতম জনপ্রিয় ফসল। তবে এটি চাষে কৃষককে ডগা ছিদ্রকারী সাদা মাছি, জাব পোকাসহ ৩৬ ধরনের পোকার আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়। এই ধরনের স্ত্রী পোকা পাতার নিচে, ডালপালা ও ফুলের ওপর ডিম পাড়ে। পরবর্তী সময়ে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়ে গাছের নরম অংশে ঢুকে সংরক্ষিত টিস্যু খেয়ে ফেলে। ফলে গাছের ওপরের অংশ শুকিয়ে মারা যায়। গাছে ফল এলে ফলের অভ্যন্তরীণ অংশেও আক্রমণ করে। ফলে তা নষ্ট হয়ে যায়।
দেখা গেছে, এই পোকা দমনে কৃষকরা সপ্তাহে ২-৩ বার কীটনাশক ব্যবহার করেন। তবুও এর আক্রমণের ফলে ৩০-৬০ শতাংশ বেগুন নষ্ট হয়। এটি একদিকে যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অন্যদিকে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়।
এই সমস্যা সমাধানে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা মেটিং ডিসরাপশন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। ভার্জিনিয়া টেকের আইপিএম ল্যাবের পরিচালক ড. রাঙ্গাস্বামী মুনিয়াপ্পান গবেষণাটি পর্যবেক্ষণ করেন।
গবেষক দলের সদস্য ও কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ জানান, মেটিং ডিসরাপশন হলো এক পরিবেশবান্ধব কীট দমন প্রযুক্তি। যা কৃত্রিম উদ্দীপনার মাধ্যমে পোকাদের বিভ্রান্ত করে এবং তাদের সঙ্গী সন্ধান ও প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। এতে তাদের বংশবিস্তার বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে কীটের সংখ্যা কমে আসে। জমিতে চারা রোপণের সাত দিনের মধ্যে প্রথমবার মেটিং ডিসরাপশন জেল প্রয়োগ করা হয়। গাছের ডগায় বা কাঠের সঙ্গে বেঁধে মাসে একবার প্রয়োগ করলেই হয়। ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, মাগুরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। তবে তাপমাত্রা ও আবহাওয়া ব্যবধানে এর কার্যকারিতার পার্থক্য হতে পারে।
গবেষকরা আরও জানান, রাসায়নিক দ্রব্যের খরচ এবং ক্ষতির দিকে বিবেচনা করলে, মেটিং ডিসরাপশন প্রযুক্তি বেগুন চাষে অনেক লাভজনক। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে একদিকে কৃষক লাভবান হবেন, অন্যদিকে রাসায়নিকের ক্ষতিকর পরিমাণ কমবে। এই গবেষণা প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য ছিল কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ সম্মতভাবে ফসল চাষ করা।