• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত যে কারণে বাঁধ খুলে দিল


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৪, ০৬:০২ পিএম
ভারত যে কারণে বাঁধ খুলে দিল
কুমিল্লা সদর উপজেলার চানপুর এলাকা

১৯৯৩ সালের পর প্রথমবারের মতো খুলে দেওয়া হয়েছে ভারতের ত্রিপুরার ডিম্বুর জলাধারের বাঁধ। কয়েক দিন ধরে ত্রিপুরায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতে জলাধারের পানি বৃদ্ধি পায়। এরপরই বাঁধের স্লুইসগেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

ত্রিপুরায় অতিবৃষ্টি এবং বাঁধ খুলে দেওয়ার পর হু হু করে বাংলাদেশে ঢুকছে পানি। এতে করে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে।

কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুর থেকে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে তিন উপজেলার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি ঢুকে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক ও উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে বন্ধ আছে যান চলাচল। লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগও।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় চার হাজার হেক্টর এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত নদীটির পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করলেও দ্রুতই দুকূল ছাপিয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গোমতীপারের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে নদীটিতে এত পানি দেখেননি তারা। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলাটিতে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরও বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ। তিনি জানান, কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন করছেন।

বুধবার সকালে কুমিল্লা গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রত্নবতী, টিক্কারচর, জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গোমতীর তীর ঘেঁষে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। চরাঞ্চলের কয়েক হাজার একর সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা জানান, তিনি মঙ্গলবার রাত থেকে গোমতীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরছেন। বিভিন্ন এলাকায় গোমতীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সব এলাকায় স্থানীয়রা মাটি ও বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন।

টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে গোমতী ছাড়াও কাকড়ী, পাগুলি ও সালদা নদী দিয়ে ভারত থেকে হু হু করে পানি আসা অব্যাহত রয়েছে। এতে কুমিল্লায় বন্যার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে কুমিল্লায় গোমতীর চরে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ জানান, সেখানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছেন।

Link copied!