• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাঁশি বিক্রি করে সংসার চালান রব্বানি


বিজন কুমার
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৩, ০৬:০৩ পিএম
বাঁশি বিক্রি করে সংসার চালান রব্বানি

লাল রঙের গেঞ্জি আর নীল রঙের জিন্স প্যান্টে মোড়ানো পুরো শরীর। অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে নীল রঙটিও ফ্যাকাশে হতে ধরেছে। অগোছালো চুল, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ ভর্তি বাঁশের বাঁশি। মুখের ভাবমূর্তি যেন সাক্ষী দিচ্ছে সারাদিনের পথ চলার ক্লান্তি। হাতে থাকা বাঁশিতে সুর তুলে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় হেঁটে চলেছেন এক যুবক। যার পেশা বাঁশি বিক্রি করা।

কারওয়ান বাজারে দেখা যায় এমনই এক বাঁশিওয়ালাকে। ব্যস্ততার শহরে গাড়ির ইঞ্জিন আর হর্নের শব্দে যখন কানে তালা ধরে। লোকজনের গিজগিজ শব্দে যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে জনজীবন। ঠিক তখন এই বাঁশির সুর যেন মন জুড়িয়ে আসে।

বাঁশিতে সুর তোলা এই যুবকের নাম রব্বানি। কয়েক বছর আগে বাঁশির প্রতি অনুরাগ নিয়ে কর্মের সন্ধানে পারি জমান ঢাকায়। কাজ নেন জর্দা তৈরির কোম্পানিতে। শুরুর দিকে মনের ওপর চাপ দিয়ে কাজ করলেও, একপর্যায়ে জর্দা প্রস্তুতের কাজ ছেড়ে দেন তিনি। পরে বেছে নেন অনুরাগের সেই বাঁশি। বাঁশিকেই করে তোলেন মানসিক প্রশান্তি আর আয়ের একমাত্র উৎস।

৫ সদস্যের সংসারে একমাত্র কর্মক্ষম রব্বানির বাঁশি বিক্রি করে দৈনিক আয় করেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। পাশাপাশি বাঁশিতে আগ্রহী ব্যক্তির তালিমও দেন রব্বানি। যা তার বাড়তি আয়ের একটি উৎস।

বাঁশির সুরে কারওয়ান বাজার মুগ্ধ করা রব্বানির সঙ্গে কথা হয়। একে একে রব্বানি বলতে থাকেন তার কথা। তিনি বলেন, “ময়মনসিংহের একজন ওস্তাদের কাছে বাঁশি বাজানো শিখেছি। কেন জানি না, বাঁশিটা খুব টানে আমাকে। বাড়িতে অভাব থাকায় ঢাকায় চলে আসি। শুরুতে জর্দা কোম্পানিতে কাজ শুরু করি। অনেক কষ্টের কাজ। জর্দার অসহ্য গন্ধ। সব মিলিয়ে কাজ ছেড়ে দিয়েছি। এরপর থেকে বাঁশি বাজাই আর বিক্রি করি। এভাবে ৪-৫ বছর কেটে যায়। শুরুর দিকে পরিবার দেশে ছিল (নিজ বাড়ির এলাকা)। এখন পরিবারকে নিয়ে ঢাকায় থাকি।”

নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে এই বাঁশি বিক্রেতা আরও বলেন, “ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বাঁশি বিক্রি করি। বাঁশি বাজানো হচ্ছে মনের খোরাক। মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বাঁশি বাজাই। যেদিন চাচ্ছি বের হচ্ছি। না হলে বাড়িতেই। একবারে স্বাধীন।”

আয়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রব্বানি বলেন, “প্রতিদিন সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হই, রাতে ফিরি। দুপুরে বাইরে যা জোটে খাই। কেউ বাঁশি বাজানো শিখতে চাইলে শেখাই। এতে অনেকেই খুশি হয়ে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা দেন। তাছাড়া সারা দিন বাঁশি বিক্রি করে ৫০০-৬০০ টাকা বিক্রি হয়। এভাবেই চলে...।”

Link copied!