পহেলা বৈশাখে ভোরের আলো ফুটতেই এবারের নতুন বছরের আবাহন শুরু হবে আহীর ভৈরব রাগে বাঁশির সুরে। পুরো আয়োজনে থাকছে নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, কবিতা, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ৩০টি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাবেন ছায়ানটের শিল্পীরা।
বর্ষবরণে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে রমনার বটমূলে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। বসানো হয়েছে পাটাতন। বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নির্দিষ্ট সীমানা। শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে মঞ্চে অনুশীলন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা। শব্দ ব্যবস্থাপনা, কারিগরি ব্যবস্থা এবং মঞ্চের সঙ্গে শিল্পীদের অভ্যস্ত করতে মোট ১৭০ জন শিল্পী মঞ্চে দুই ঘণ্টার বেশি সময় নিয়ে মহড়া করেন।
মহড়ার সঙ্গে উপস্থিতি ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। ২০০১ সালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে রমনায় বোমা হামলার ঘটনার পর থেকেই প্রতিবছরের মতো এবারও জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তার মহড়াও দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। এসময় বোমার বিস্ফোরণের শব্দ তৈরি করে মহড়াও দেওয়া হয়। এজন্য ১০ মিনিট বন্ধ রাখা হয় অনুশীলন। ছায়ানটের বিশেষ কার্ডধারীরাই শুধু নিরাপত্তা সীমানার ভেতরে প্রবেশ করতে পারবন। অন্য সবাই নিরাপত্তাবেষ্টনীর বাইরে বসে বর্ষবরণের আয়োজন উপভোগ করতে পারবেন।
এদিকে, দূর থেকেও যেন বর্ষবরণের আহ্বান জানাতে পুরো রমনাজুড়েই স্থাপন করা হয়েছে শব্দযন্ত্র। একটু পরপর বসানো হয়েছে মাইক। রমনার বটমূলের নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করতে র্যাবের সদস্যরা বসিয়েছেন বিদ্যুতায়িত নিরাপত্তা ফটক। রয়েছে সিসিটিভি, ডগ স্কোয়াড।
প্রসঙ্গত, দেশের অন্যতম প্রধান সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র ও সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের আয়োজনে ১৯৬৭ সাল থেকে বর্ষবরণের সংগীতানুষ্ঠান হয়ে আসছে। মাঝখানে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকে। আর করোনা মহামারির সময় অনলাইনে বর্ষবরণ করা হয়। এছাড়া রমনার বটমূলে আর কখনও বর্ষবরণে ছন্দপতন হয়নি।
ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী গণমাধ্যমকে বলেন, নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে সাংস্কৃতিক আয়োজন শিল্পী ও দর্শকসহ সবার জন্য অস্বস্তিকর হলেও পরিস্থিতি মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ছায়ানটের যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত রায় বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংস্কৃতির সম্পর্ক তৈরি করতে না পারাতেই আজকের এ সংকট।