ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট গাজীপুরের রেললাইন কাটার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সংস্থাটি দাবি করেছে, আটক দুজনের মধ্যে ইখতিয়ার রহমান কবির ঘটনা বাস্তবায়নের মূল হোতা। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নির্দেশে তারা এই কাজ করেন। কবির ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও যুবদলের নেতা।
গ্রেপ্তার আরেকজন হলেন, ছাত্রদলের পুরান ঢাকার লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ইমন হোসেন (১৯)।
সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, সিটিটিসির প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।, তিনি বলেন, নাশকতাকারীদের রেল লাইন কাটার পর মোটা অংকের অর্থ দেওয়া হয় দল থেকে। নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করা এবং ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো।
রেলে নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, “সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবিরকে নির্দেশনা দেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কবির গাজীপুর ছাত্রদলের দুই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা হলেন, গাজীপুরের আজিমুদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক তোহা ও গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম।”
সিটিটিসির প্রধান আরও বলেন, “পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তোহা ও মাসুম মিলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়ার বাসায় সভা করে কৌশল নির্ধারণ করেন। ”
প্রথমে তারা রেললাইনের নাট-বল্টু খুলে ট্রেন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা নাট-বল্টু খুলতে ব্যর্থ হন। বিষয়টি কবিরকে জানালে রেললাইন কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি রেললাইন কাটার জন্য লোকবল দেওয়ার কথা জানান।
কবির লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ইমন হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রথমে বড় লোহার পাত কাটা শেখার জন্য টাকা দেন।
ইমন লোহা কাটার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর স্থানীয়ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার কেনা হয়। লোহা কাটার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনা হয় ঢাকা থেকে। কবির, ইমন, তোহা ও মাসুম মিলে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুর মার্কেটের একটি দোকান থেকে যন্ত্রপাতি কিনে ইমনের বাসায় রাখেন।
সিটিটিসির প্রধান আরো বলেন, “পরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ ডিসেম্বর ইমনের বাসা থেকে যন্ত্রপাতি গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। একইদিন ইমন ও কবির কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে জয়দেবপুর রেল স্টেশনে যান। তারা ট্রেনের শিডিউল জেনে রাখেন। ১৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা ঘটনাস্থলের দিকে যান। ঘটনাস্থলে মোট নয়জন একত্রিত হয়ে রেললাইন কাটার কাজ শুরু করেন।”
রেললাইন কাটার পর দুটি সিলিন্ডার ফেলে রেখে গেলেও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে তারা ঢাকায় যায়। ভাড়া করা মাইক্রোবাস তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফটকে নামিয়ে দেয়। পরে তারা আত্মগোপনে যান। এর আগে রেললাইন কাটার কথা টুকুকে জানানো হয়।
সিসিটিসি প্রধান বলেন, “গ্রেপ্তার কবির এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি গত ২৮ অক্টোবর থেকে যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, নিউ মার্কেট, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০টিরও বেশি বাসে আগুন দিয়েছেন।”