বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার (৮ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া গাড়িচালক আবেদ আলীর ছেলে মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিআইডির সদর দপ্তরের সুত্রের বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন মাধ্যম।
এর আগে বিগত ৩৩তম বিসিএস থেকে ৪৬তম বিসিএস পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ক্যাডার-ননক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা নিয়ে রোববার (৭ জুলাই) অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি বেসরকারি টেলিভিশন।
ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন হলেন বিপিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। তিনি মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বাসিন্দা।
একজন ড্রাইভার হলেও সৈয়দ আবেদ আলীর কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য সামনে আসে। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরেন নেটিজেনরা।
ঢাকার ভেতরে সৈয়দ আবেদ আলীর দুইটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আলিশান বাড়ি রয়েছে এমন তথ্যও সামনে আসছে। আবেদ আলীর ফেসবুক পেজে নিজের একটি হোটেলের তথ্য তুলে ধরেছেন নিজেই। গত ১৮ মে এক পোস্টে তিনি লেখেন, “আমাদের নতুন হোটেল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা।”
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন আবেদ আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম। যিনি মানুষকে সাহায্য করার ভিডিও প্রচার করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চড়েন দামি গাড়িতে। পড়াশোনা করেছেন দেশের বাইরে। তার ফেসবুকে দুইটা গাড়ির ছবি পোস্ট করেছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ ও ৪০ লাখ। তবে গাড়িগুলো তার নিজের কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ফেসবুকে বাবা আবেদ আলীর একটি ছবি পোস্ট করে সিয়াম লেখেন, ‘আব্বু কুয়াকাটা গিয়েছিলো একটা ব্যবসায়িক সফরে। সেখানে স্থানীয় এক ছোট ভাই ছবিটি তুলে ইনবক্সে দিলো। সাধারণত আব্বু কোনো ওয়াক্তের নামাজ অবহেলা করে না। যখন যেখানে থাকে তখন সেখানেই পাক-পবিত্র জায়গা খুঁজে নামাজ আদায় করে নেয়। খুব সম্ভবত সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর ভালোবাসা না থাকলে এটা সম্ভব নয়। আল্লাহ আমার বাবাকে কবুল করুক।’ তবে একজন গাড়িচালক কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন সেই প্রশ্নই করছেন নেটিজেনরা।
সিআইডি জানায়, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারমধ্যে সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম ছাড়াও রয়েছেন, পিএসসির উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম।
এ ছাড়াও রয়েছেন- সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিকী, ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করা এবং বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন ও বেকার যুবক লিটন সরকার।
উল্লেখ্য, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বাসিন্দা আবেদ আলী সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তিনি সমাজের বিত্তবান ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়মিত চলাফেরা করতেন। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গেও উঠবস করতেন।