ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত করেছে দুই দেশের পুলিশ। যদিও তার মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি। এই হত্যাকাণ্ড কীভাবে ঘটেছে ও কারা ঘটিয়েছে, সেই রহস্যভেদের তথ্যও উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। এখনো লাশের খোঁজে কাজ করে যাচ্ছেন কলকাতা সিআইডি ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যরা। লাশ পাওয়া না গেলে কিছু আইনি জটিলতার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
লাশ না মিললে বা কোনো দায়িত্বশীল সংস্থা আনারের মৃত্যুর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করলে জাতীয় সংসদে তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা যাচ্ছে না বলে আগেই জানিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। মরদেহ বা এর অংশবিশেষ না মিললে বিচার হওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে নানান শঙ্কা। তবে আইনজীবীরা বলছেন, লাশের খোঁজ ছাড়াই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে বিচার করা সম্ভব। এমন বিচারের নজিরও রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
গত ১২ মে চিকিৎসার কথা বলে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামের এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন তিনি। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম।
এর পাঁচ দিন পরে ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। কিন্তু আর খোঁজ মেলেনি টানা তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পাশের নিউ টাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেনসে আনারকে খুন করা হয়েছে। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে মরদেহের সন্ধান মেলেনি সেখানে।
ওই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে ভারত ও বাংলাদেশে পৃথক মামলা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এরপর নিয়ম অনুসারে তাদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ড শেষে ইতোমধ্যে আদালতের কাছে জবানবন্দিও দিতে শুরু করেছেন আসামিরা।
এদিকে যে ভবনে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেই ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু মাংসপিণ্ড উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করছে কলকাতা পুলিশ। এটা আনারের শরীরের অংশ কি না, তা ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে। এর জন্য স্যাম্পল দিতে কলকাতায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তবে এই মাংসপিণ্ড আনারের দেহাংশ প্রমাণিত না হলে হত্যাকাণ্ডের বিচার থেমে থাকবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অস্পষ্টতা।
মরদেহ না পাওয়া গেলেও বিচার করার বিষয়ে ১৯৮১ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার রায় হয়েছে। ‘রামানানথ এবং অন্যান্য বনাম হিমাচল প্রদেশ’ শিরোনামে মামলার রায়ের ২৮ নম্বর প্যারায় বলা হয়েছে, যদি মরদেহ না পাওয়া যায় তাহলে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণগুলো এমন হতে হবে যে সব ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করেই ধরে নেওয়া যাচ্ছে ‘লোকটি মৃত’।