প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো একটি বৈঠকে অংশ নিতে সচিবালয়ে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। বুধবার (২৯ নভেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন তিনি।
এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকগুলো রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে সচিবালয়ের ছয় নম্বর ভবনের ১৩ তলায় অবস্থিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিসভা কক্ষে আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই কক্ষটিকে মন্ত্রিসভার জন্য প্রস্তুত করা হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় না। বছরে দু-একবার সচিব পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এবার প্রধান উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে ধুয়ে-মুছে সবকিছু পরিষ্কার করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রথমবার সচিবালয়ে আসা উপলক্ষে অন্যান্য ভবন ও সচিবালয়ের ভেতরের রাস্তা ঝাড়মোছ করা হয়েছে। এ ছাড়া আজকে সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অর্থাৎ কর্মকর্তারা দর্শনার্থীদের জন্য যে পাস দিতে পারেন, সেটা বন্ধ রাখা হবে। তবে প্রধান উপদেষ্টা সচিবালয় ছেড়ে যাওয়ার পর কর্মকর্তাদের পাস দেওয়া আবারও শুরু হতে পারে।
উল্লেখ্য, বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকগুলো সাধারণত সচিবালয়ের এক নম্বর ভবনের চতুর্থ তলার মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হতো ।
২০১৭ সালে সচিবালয়ের এক নম্বর ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
এরপর সচিবালয়ের ২০ তলাবিশিষ্ট ছয় নম্বর ভবনের ১৩ তলায় মন্ত্রিসভা বৈঠকের জন্য আলাদা আরেকটি কক্ষ প্রস্তুত করা হয়।
কিন্তু ২০১৯ সালে বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর ৬ নম্বর ভবনের অগ্নি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর থেকেই সাধারণত মন্ত্রিসভার বৈঠকগুলো প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতো।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় অতিথি যমুনা এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক করে আসছেন।
আজই প্রথমবারের মতো উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক সচিবালয় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
আজকের উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধন প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। আইনটি সংশোধন হলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা সংঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে ট্রাইবুনাল সেই দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করতে পারবে।
গতকাল মঙ্গলবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’ এ কিছু মারাত্মক বিচ্যুতির কথা দেশবিদেশি মানবাধিকার সংগঠন বলেছিল। সুশীল সমাজও বিভিন্ন সময় বলেছিল। সরকার যখন এটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিল, তখন সরকার চেয়েছে বিচারটি যেন দেশীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয়। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে যেন সুবিচার সুনিশ্চিত করা হয়। এ জন্য ব্যাপক পরামর্শ করা হয়েছে। একটি অসাধারণ সংশোধনী করার জন্য চেষ্টা হয়েছে, যেটি এর বিচারের গুরুত্ব, যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেবে।`
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়ায় রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রস্তাবে যেটি আছে, সেখানে আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তারা সুপারিশ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন।’