দেশে ইফতারের জনপ্রিয় অনুষঙ্গ খেজুর। দিনের শেষে এই বিদেশি ফল দিয়ে রোজা ভাঙতে রোজাদাররা বেশ আবেগপ্রবণ। এছাড়া পুষ্টিগুণের হিসাব তো রয়েছেই। গত কয়েক বছর খেজুর কিনতে তেমন জটিলতা ছিল না। কিন্তু এবার রোজার আগেই চোখ রাঙাচ্ছে দাম। গত বছরের চেয়ে এবার দ্বিগুণ হয়েছে দর।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা যায়, খুচরা বাজারে এক কেজির খেজুরের সর্বনিম্ন দাম ২০০ টাকা আর সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা। রোজার আগেই কেজিপ্রতি খেজুরের দাম বেড়েছে ১০০-২০০ টাকা। অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের কারণে খেজুরের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।
তাদের ভাষ্য, রোজা এলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সুযোগ নিয়ে বসে থাকে খেজুরসহ রমজানের অনুষঙ্গ পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য। সেই ধারাবাহিকতায় রোজার আগেই খেজুরের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আবু বক্কর নামের এক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রোজা এলেই বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা চলে। যা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলমান থাকে। এমনভাবে পণ্যের দাম বাড়ায় যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। সাধারণ মানুষ পণ্য কিনতে পারবে কিনা সেই হিসেব তারা করে না।”
এই ক্রেতা আরও বলেন, “ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে স্বস্তির নিত্যপণ্যের বাজার এখন অস্থির। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ব্যবসায়ীরা বেশি পার পেয়ে যায়। যার ফলে কোনো না কোনো পণ্যের দাম নিয়ে ছেলেখেলা চলে।”
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হয় গলা বা বাংলা খেজুর। প্রতি কেজি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। যদিও গত বছরের অস্থির এ খেজুর প্রতি কেজি ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। জাহিদি খেজুর এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা কেজি দরে। গত বছরের দাম ছিল মাত্র ১৫০ টাকা। বাজারে দুই ধরনের দাবাস খেজুর পাওয়া যায়। মানভেদে এ খেজুর ৪৫০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ছিল ৩০০-৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে গলা, জাহিদি ও দাবাস—এ তিন খেজুরের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে বরই খেজুর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৪০-৫৪০ টাকা কেজি দরে। গত বছর বিক্রি হয়েছিল ২২০-৪৩০ টাকায়। সেই হিসাবে খেজুরের এ জাতটির দামও বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
এদিকে অভিজাত শ্রেণীর কাছে পছন্দের খেজুরের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের মেডজুল, মাবরুম, আজওয়া ও মরিয়ম। বাজারে এগুলোর দাম সবচেয়ে বেশি। জাম্বো মেডজুল মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। সাধারণ মেডজুল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। গত বছর এর দাম উঠেছিল ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। মাবরুম খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। গত বছর ছিল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বাজারে আজওয়া পাওয়া যায় দুই ধরনের। বর্তমানে এটি ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর দাম ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত ৭ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ২ লাখ টনের বেশি বিদেশি ফল। আমদানি মজুত থাকার পরও দাম বৃদ্ধিতে খেজুরের শুল্কায়ন মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করছেন আমদানিকারকরা।
তারা জানান, শুল্ক ও করহার বৃদ্ধি, টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ঋণপত্র জটিলতার কারণে এ বছর খেজুরের দাম বেড়েছে। শুল্ক না কমালে সামনের রোজায় দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধির ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর খেজুর আমদানিতে দুই-তিন গুণ হয়েছে। যদিও বিশ্ববাজারে খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় বাড়েনি। আবার পরিবহন খরচও গত বছরের তুলনায় বর্তমানে কম।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানিকারক বা পাইকারি ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি দাম বাড়িয়েছেন। গত কয়েক মাসে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকাও বেড়েছে কিছু খেজুরে।
আব্দুল হেলাল নামের এক খেজুর ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা অল্প পরিমাণে খেজুর এনে বিক্রি করি। পাইকারি ব্যবসায়ী বা আমদানিকারকরা দাম কমালে আমরা কীভাবে কম দামে বিক্রি করব। তারা যেকোনো সময় দাম বাড়িয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আমরা জিজ্ঞেস করলে জানায় ডলার সংকট।”
তিনি আরও বলেন, “দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ এসে আমাদের ধরে। অথচ বড় ব্যবসায়ীদের ধরতে পারে না। ভোক্তা এসেও আমাদের ধরে। বড় ব্যবসায়ীদের ধরতে পারে না। তারা জানে না দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের লাভের অংশ আগের থেকে ছোট হয়ে গেছে। কোনোমতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে গেছে বর্তমানে।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল হেলাল আরও বলেন, “প্রতিদিন খেজুরের দাম বাড়ছে। গতকাল খেজুর কিনে আনি এক দামে, আবার দুইদিন পর কিনে আনি ভিন্ন দামে। বলা চলে প্রতিদিন দাম উঠছে, কিন্তু নামার কোনো কারণ দেখছি না আমরা। গত এক মাস ধরে কোনো কারণ ছাড়াই বড় বড় ব্যবসায়ীরা খেজুরের দাম বাড়াচ্ছে। জানি না রোজার আগেই আরও বাড়বে কি না।”