রাজধানীতে বছরের শুরুতে সবজির দাম ওঠানামা করলেও মুদিপণ্যের বাজার ভরে গেছে ক্রেতাদের অভিযোগে। এর বাইরে ঊর্ধ্বগতি মূল্য তালিকায় রয়েছে খেজুর।
ক্রেতাদের অভিযোগ, আগামী রমজানকে কেন্দ্র করেই বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম। তবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, “সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় বাড়ছে এসব পণ্যের দাম।”
চাল
বাজারে নিত্যপণ্যের মধ্যে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য চালের দাম প্রকারভেদে কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। বর্তমানে সিদ্ধ চালের মধ্যে আঠাশ, নাজির শাইল, মিনিকেট, গুটিস্বর্ণা, পায়জাম চালের চাহিদা রয়েছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে, গত ডিসেম্বর মাসে খুচরা বাজারে আঠাশ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। আর জানুয়ারি মাসে এই চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা।
এছাড়াও এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি নাজির শাইল ৬০ থেকে ৭৫ এর স্থলে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে। মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৫ এর স্থলে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। গুটি স্বর্ণা ৪৭ থেকে ৪৮ এর স্থলে ৪৯ থেকে ৫০ টাকা এবং পায়জাম ৪৯ থেকে ৫০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা।
চাল ব্যবসায়ী শাহজাহান বলেন, “বর্তমানে চালের সরবরাহ কম থাকার কারণে চালের দাম বেশি। আমরা তো খুচরা ব্যবসায়ী। আমাদের থেকে ভালো বলতে পারবেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। দাম বেশি হওয়ার কারণে ক্রেতা যেখানে ১০ কেজি কিনতেন। এখন কিনছেন ৫ কেজি।”
লাকী আলমগীর নামের এক চাল ক্রেতা বলেন, “নির্বাচনের কিছু দিন আগে থেকে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। নির্বাচনের পরে যে দামে চাল বিক্রি হচ্ছে তাতে সংসার খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে। চালের পাশাপাশি প্রতিটা জিনিসের দাম বাড়ছে। নতুন সরকারের কাছে একটাই চাওয়া, সব পণ্যের বাজার যেন নিয়ন্ত্রণ থাকে।”
ডাল
বছরের শুরুতে চালের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে বেড়েছে ডালের দাম। প্রতি কেজি মসুর, খেসারি, মুগ, অ্যাংকর ও বুটের ডালে বেড়েছে ৬০ টাকা পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতে মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা। আর ডিসেম্বর মাসে এই ডাল বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
এছাড়াও প্রতি কেজি খেসারি ডাল ৯০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, মুগ ডাল ৯০ থেকে ১০০ স্থলে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০, অ্যাংকর ৭০ টাকার স্থলে ৮০ টাকা এবং বুটের ডাল ৯৬ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়।
মামুন নামের এক মুদি ব্যবসায়ী বলেন, “আমি ডালের দাম বাড়ার পেছনে সরবরাহ কম থাকাকে দায়ী করছি। কারণ আমরা খুচরা ব্যবসায়ী। যেমন দামে কিনি, তার থেকে ২-৫ টাকা লাভে বিক্রি করি। তবে দাম বাড়ার কারণে ক্রেতা বাজারে কমেছে। তাছাড়া মাসের শেষ। এখন দেখা যাবে আগামী মাসে কি হয়?”
ক্রেতা তাওহিদ হাসান বলেন, “মাসের শুরু হইল, আর দাম বৃদ্ধি পেল। আগে তো বিপাকে পড়তে হয়েছে। এখন আরও হচ্ছে। সরকারের কাছে একটাই চাওয়া নিত্যপণ্যের দামটা নিয়ন্ত্রণ থাকলে নিম্ন আয়ের মানুষরা ভালো মতো খেতে পারবে।”
তেল ও আটা
বাজারে চালের সঙ্গে সঙ্গে অস্থির হয়ে উঠেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল ও আটার দাম। কারওয়ান বাজারের চিত্র বলছে, গত ডিসেম্বর মাসে হাফ লিটার বা ৫০০ মিলিলিটার বোতলজাত সোয়াবিন তেলের দাম ছিল ৮৫ টাকা। এক মাস পর চলতি মাসে একই পরিমাণের তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ টাকায়।
এছাড়াও সোয়াবিন ১ লিটারের বোতল ১৬৯ টাকার স্থলে ১৭০ টাকা, ২ লিটারের বোতল ৩৩৫ টাকার স্থলে ৩৪০ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতল ৭৯০ টাকার স্থলে ৮১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে, ২ কেজির আটার প্যাকেটে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্রেতা মো. রাজিব শেখ বলেন, “তেলের দাম বেড়ে যাওয়া খুবই অবাক বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবুও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়েছে।”
ছোলা ও খেজুর
রমজান মাস আসতে বাকি মাত্র দেড় মাস। এরমধ্যেই রাজধানীর বাজারে বেড়েছে ছোলা বুট ও খেজুরের দাম।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ছাড়াও বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে জানা গেছে, মরিয়ম জাতের খেজুর বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯০০ টাকায়। এছাড়াও প্রতি কেজি মেগজুল ১৬০০, শুকতারি ৯০০, তিউনেশিয়ান ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি মানভেদে বড়ই ৩০০ থেকে ৫০০, মাবরুম ১১০০ থেকে ১৫০০, সাফাভি ৯০০ থেকে ১০০০, দাবাস ৫০০ থেকে ৫১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে প্রতি কেজি মরিয়ম খেজুরের দাম ছিল ৮০০ টাকা। এছাড়াও মেগজুল ১৫০০, শুকতারি ৭০০, তিউনেশিয়া ৫৫০, বড়ই ২০০ থেকে ৪০০, মাবরুম ৭০০ থেকে ৮০০, সাফাভি ৭০০ থেকে ৮০০ এবং দাবাস বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা কেজি।
এদিকে, রাজধানীর বাজারে এখন ছোলা বুট বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১১০ টাকায়। ১৫ দিন আগে এই ছোলা বুটের দাম ছিল প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৯০ টাকা।
মহসিন নামের একজন ক্রেতা বলেন, “ছোলা বুটের দাম বাড়ছে। রমজানের আগেই দাম বেড়ে যাওয়া সুখবর নয়। কেন বাড়ছে, তা খুচরা বিক্রেতারা জানবে না এটাই স্বাভাবিক। বড় বড় যারা ব্যবসায়ী তারাই সিন্ডিকেট করছে।”