নিজের সম্পদের হিসাব তুলে ধরলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। অবৈধ লেনদেন বন্ধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে ১৫ লাখ কর্মচারীর সম্পদ বিবরণীর তথ্য সিলগালা করা খামে জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দিয়েছে সরকার।
এবার সেই সম্পদের বিবরণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেছেনপ্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্ট তিনি এ বিবরণী তুলে ধরেন।
এতে তিনি বলেন, “২০০০ সালের দিকে আমার বাবা ঢাকা শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত এলাকা ডেমরার কাছে জুরাইন এবং যাত্রাবাড়ীর মধ্যবর্তী দনিয়া এলাকায় পাঁচতলা একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণ করেন। উত্তরাধিকারসূত্রে সেই ভবনের ১ হাজার ১৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আমি পেয়েছি। ২০১০ সালে দনিয়া ছেড়ে চলে আসলেও এখনও সেই ফ্ল্যাট আমার মালিকানায় রয়েছে। এক সময় ফ্ল্যাটটি আমার এক ভাইয়ের কাছে বিক্রি করার কথা ভেবেছিলাম, যিনি এখনও সেখানে থাকেন। তবে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি। জীবনের এক পর্যায়ে হয়তো আবার দনিয়ায় ফিরে যাব। বাবা-মায়ের বাড়িতে গেলে আমি এখনও সেই সরু করিডোরগুলোতে তাদের হাঁটতে দেখি। আমার প্রয়াত বাবার কোরআন তেলাওয়াতের শব্দ শুনি, মা যেভাবে বিনয়ের সঙ্গে সালাত আদায় করতেন তাও যেন দেখতে পাই।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে শাহীনবাগে ১ হাজার ১০০ বর্গফুটের একটি তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। ভাই এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন কিছু টাকা দিয়েছিলেন, আর বাকিটা আমার সঞ্চয় থেকে দিয়েছিলাম। আমি জায়গাটি ভালোবাসি। তবে নিরাপত্তার কারণে হয়তো খুব শিগগিরই এই ফ্ল্যাট ছেড়ে যেতে হবে।
সম্প্রতি দেখছি, আমাদের এলাকার মসজিদের ভিক্ষুকরাও আমাকে চেনেন। কিছুদিন আগে কয়েকজন তরুণের আড্ডার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তারা আমাকে ‘গণশত্রু’ বলে ডেকেছিল। আমার পরিবার এই নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত। এ কারণে আমাকে হয়তো শিগগিরই সরকারি একটি ফ্ল্যাটে চলে যেতে হবে।’
গ্রামের সম্পদের পরিমাণ জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে আমি আমার এক শ্যালকের কাছ থেকে ময়মনসিংহে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। খুব সস্তায় পেয়েছিলাম সেটি। একই ভবনে আমার স্ত্রী তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন। এই দুটি ফ্ল্যাট আমাদের মাসিক আয়ের একটি উৎস। এছাড়া গ্রামে আমার ৪০ শতাংশ আবাদি জমি আছে। বহু বছর ধরে একটা ধারণা লালন করেছি, অবসরে গ্রামে ফিরে যাব। শুধু লিখব আর হাঁটব—এটাই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু এখন মনে হয়, গ্রামে আর কখনও ফিরে যাওয়া হবে না। হয়তো আমি মরে গেলে আমার সন্তানরা আমাকে বাবা-মায়ের পাশেই কবর দেবে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘আমার একটি মাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। যেখানে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা (১১.৪ মিলিয়ন টাকা) সঞ্চিত আছে। এই আগস্টে আমি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিতে দুই দশকের চাকরি ছেড়েছি। অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থের বেশিরভাগই আমার এএফপির চাকরির পেনশন এবং গ্র্যাচুইটির। কিছু মানুষ আমার কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ধার নিয়েছে। আমার ধারণা, বছরের শেষে আমার সঞ্চয় হয় অপরিবর্তিত থাকবে, নয়তো খরচের কারণে কমে যাবে। আমার একটি গাড়ি আছে। ঢাকা শহরে একটি গাড়ি পরিচালনা এবং ড্রাইভার রাখার মাসিক খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
শফিকুল আলম আরও বলেন, আমি জানি না, প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে কাজ শেষ করার পর আমার ভাগ্য কোথায় নিয়ে যাবে। তবে নিশ্চিত জানি, বছরের পর বছর পশ্চিমা বিভিন্ন মিডিয়া ও পরামর্শ প্রতিষ্ঠানে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজ করে যে অর্থ সঞ্চয় করেছি, তা দিয়ে ভবিষ্যতে কোনো কাজ না পেলেও মধ্যবিত্তের মতো সাধারণ জীবনযাপন করতে পারব। ক্ষমতায় থাকলে অনেকেই উপার্জন নিয়ে মিথ্যা রটায়। এ জন্য আমার পূর্ণাঙ্গ সম্পত্তির বিবরণ তুলে ধরা।’