• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩০, ৩০ রজব ১৪৪৬

২৬ ঘণ্টা পর কর্মবিরতি স্থগিত, ৯টা থেকে চলবে ট্রেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৮:১১ এএম
২৬ ঘণ্টা পর কর্মবিরতি স্থগিত, ৯টা থেকে চলবে ট্রেন
সকাল থেকে চলবে ট্রেন। ছবি: সংগৃহীত

২৬ ঘণ্টা পর কর্মবিরতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়ন। ট্রেনের রানিং স্টাফদের মাইলেজ সমস্যা বুধবারের (২৯ জানুয়ারি) মধ্যে সমাধান করা হবে, রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের এমন আশ্বাসে মধ্যরাতে  তারা  কর্মবিরতি থেকে সরে আসেন।

ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান রেলওয়ের সব রানিং স্টাফকে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। ফলে সকাল ৯টা থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত আড়াইটা পর্যন্ত মোট ২৬ ঘণ্টা সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। কর্মসূচি প্রত্যাহারের ফলে আজ সকাল ৯টার পর থেকে শিডিউল ট্রেনগুলো প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করবে। কারণ, বাংলাদেশ রেলওয়ে মধ্যরাতে জানিয়েছে আন্দোলনের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টা পর্যন্ত সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এসব ট্রেনের টিকিট রিফান্ড নিয়ে শতভাগ টাকা যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হবে। এর আগে ২৮ জানুয়ারির সব ট্রেনের যাত্রাও বাতিল করে রেলওয়ে।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দিনগত রাতে রেলপথ উপদেষ্টার বাস ভবনে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহসহ আরও অনেকে। পরে বৈঠক শেষ হলে রাত আড়াইটার সময় সংবাদমাধ্যমের সামনে রেলওয়ের যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, আমরা যারা রেলের রানিং স্টাফ হিসেবে কর্মরত তারা ১৬০ বছর যাবত কিছু সুবিধা পেয়ে আসছি। কারণ আমাদের চাকরির ধরন আলাদা। আমাদের কোনো শিডিউল ছুটি নেই। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর আমাদের কিছু সুবিধা রোহিত করা হয়েছিল। গত সরকারের আমল থেকে আমরা বিভিন্ন সময় কর্মসূচি দিয়েছি, আবার কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরেও আমরা রেলের সচিব ও ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে বসেছি। আমরা তাদের সময় দিয়েছি। এরপরে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।

তিনি আরও বলেন, এখানে ছাত্রনেতারা আছেন ও আপনাদের সামনেই উপদেষ্টা জানিয়েছেন, কালকের মধ্যেই সমাধান করবেন। আর আমাদের পূর্বের সব সুবিধা বহাল থাকবে। আর ২০২২ সালে যাদের নিয়োগ হয়েছে, তাদের বিষয়টি আগামীকাল চিঠির মাধ্যমে জানানো হবে।

শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা কখনো যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চাইনি। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়েই কর্ম বিরতির ডাক দিয়েছিলাম। বিষয়টার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। রানিং স্টাফ ভাইদের বলব, তারা যেন তাদের কাজে ফিরে যায়, ট্রেন পরিচালনার দিকে মনোযোগ দেয় এবং আইনগতভাবে পরিচালনা করে। এখন থেকে আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিলাম।

রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, এখন রাত আড়াইটা। আমাদের সঙ্গে শ্রমিকনেতা, ছাত্রনেতারা আছেন। রেলের একটা কর্মবিরতি চলছিল। শ্রমিকনেতারা মনে করেন, এটা চললে মানুষের অসুবিধা হয়। আমরাও মনে করি অসুবিধা হয়। রেলের শ্রমিকনেতারা আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময় দেখা করেছেন কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে। এ রমধ্যে একটা দাবি ছিল রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধার বিষয়ে। এটি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে টেকআপ করি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু সুবিধা দিয়েছে। এরপরেও ওনাদের আরও কিছু দাবি আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটা বিষয় বলেছে, তাদের মাইলেজ এক মাসের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু শ্রমিকনেতারা বলেছেন, এটি তুলে দেওয়ার জন্য। আমি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলব। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমি এটা করতে সক্ষম হব।

তিনি আরও বলেন, আরেকটা বিষয়, ওনাদের রেলের যে সুবিধা আছে সেটি বহাল থাকবে। আগে থেকে যেসব সুবিধা চলে আসছে, সেগুলোতে কোনো পরিবর্তন হবে না।

কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬২ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল। সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়।

২০২২ সালের ৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১০ এপ্রিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ এপ্রিল চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেয়। পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১১ জুন তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক স্পষ্ট করে রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই বছরের ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আবারও আপত্তি জানায়। ফলে রানিং স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করে।

সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১০ দিন সময় চাইলে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়ন। কিন্তু এর মধ্যও কিছু করতে পারেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়। পরে ১ জানুয়ারি ঘোষণা করা হয়, ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চালাবে না তারা। তারই প্রেক্ষিতে গত সাড়ে ২৬ ঘণ্টা ট্রেনে ওঠেননি রেলওয়ের রানিং স্টাফরা।

Link copied!