প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট বা পিজিআর প্রতিষ্ঠা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেছেন, “জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সব খাতের উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ও গুরুত্ব আরোপ করেন।”
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেন উল্লেখ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখতে বঙ্গবন্ধু দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বাহিনীর উন্নয়ন ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার জন্য একটি বিশেষায়িত রেজিমেন্ট হিসেবে ১৯৭৫ সালের ৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন।”
তিনি বলেন “দায়িত্বের পরিধি বৃদ্ধি, সাংগঠনিক কাঠামোর পরিবর্তন এবং প্রেসিডেন্ট গার্ড সদস্যদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় রেজিমেন্ট একটি সুশৃঙ্খল, পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে নিহত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলতুন্নেসা মুজিবসহ পরিবারের শহীদ সদস্যদের। সশস্ত্র চিত্তে স্মরণ করছি, মুক্তিযুদ্ধে আত্ম উৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি, জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন ও বিদেশি বন্ধুসহ সর্বস্তরের জনগণকে। যারা আমাদের অধিকার আদায় ও মুক্তি সংগ্রামে অসামান্য অবদান রেখেছে। সহযোগিতা জানিয়ে আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছেন।”
পিজিআর উদ্দেশে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও জীবনযাত্রা এবং জীবনব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে আপনারা আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানেও নিষ্ঠার দক্ষতা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন। গৌরবময় দুটি অনুষ্ঠানে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশের অনেক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা যোগ দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণ জয় মুজিব শতবর্ষের উদযাপনকে মহিমান্বিত করেছেন। বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বলতার অনন্য আসনে উন্নীত করেছেন আপনারা। এসব অনুষ্ঠান আয়োজনে অন্য সংগঠনের পাশাপাশি আপনাদেরও রয়েছে প্রশংসনীয় অবদান। করোনা মহামারিকালে বিদেশি অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আপনাদের প্রচেষ্টা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও প্রশংসিত হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব একদিকে যেমন গৌরবময়, তেমনি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। আপনাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে ভিআইপিদের অর্থাৎ অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সর্বাত্মক সমন্বিত নিশ্চিত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে এই ভিআইপিদের জনসংযোগের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নয়, বরং জনসম্পৃক্ততার অব্যাহত রেখে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা আপনাদের কৃতিত্ব।”
তিনি বলেন, “বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান যুগে এই ভিআইপিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে, আপনাদের ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগ উপযোগী প্রশিক্ষণ ও কৌশল মতো উৎকর্ষ অর্জন করতে হবে। পিজিআরের প্রতিটি সদস্যকে হতে হবে আরও চৌকস ও দক্ষ। পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন। দায়িত্বের গুরুত্ব ও পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সাংগঠনিক কাঠামো বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাহিত্যের ব্যাপকতা বিবেচনা করে এই রেজিমেন্টকে আরও সুসংহত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমি আশা করব, আপনারা চেইন অব কমান্ডের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল থেকে আপনাদের ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের মান ও সক্রিয়তা বজায় রেখে রেজিমেন্টের অর্জিত গৌরব সমন্বিত রাখবেন।”
তিনি আরও বলেন, “নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়াই গার্ডসের লক্ষ্য। এ মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে আপনাদের দায়িত্ববোধ পেশাগত উৎকর্ষ, দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার জন্য প্রশংসিত। একাগ্রতা, শৃঙ্খলা বোধ এবং সর্বোপরি কর্তব্যের প্রতি সচেতনতা ও দক্ষতা আপনাদের অন্যদের থেকে স্বাতন্ত্র্য করে তুলবে। আমি আশা করি, আপনাদের দীপ্ত ও কর্তব্য নিষ্ঠা এবং সার্বক্ষণিক সতর্কতা বাহিনীর ভবিষ্যৎ পথ চলাকে আরও গৌরবময় করে তুলবে।”