অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র কাঠামোর কী কী সংস্কার করতে চায় এবং সেটা করতে কতদিন লাগবে, কোনো ছলচাতুরি ছাড়াই তা স্পষ্ট করে অবিলম্বে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “জাতিকে অন্ধকারে রেখে আপনারা যা খুশি তাই করবেন, আমরা তো সেটা মেনে নিতে পারব না। সুতরাং জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখবেন না। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গত ১৬ বছরের বিনা ভোটের সরকারকে মানেনি, এখন এই সরকারকেও দীর্ঘদিন মানবে না।”
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সাবুর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম ও প্রজন্ম একাডেমির যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে। সামনে আরও ঘোলাটে হতে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, এই সরকার অবশ্যই জাতিকে একটা আশার আলো দেখাবে। তবে আপনারা এমন কিছু করবেন না, যাতে জাতি আপনাদের ওপর থেকে বিশ্বাস হারায়।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, “বর্তমানে সংস্কারের কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচন নিয়ে আপনারা কোনো কথা বলছেন না। আমরা নির্বাচনের কথা বললেই আপনারা বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। এখন আমরা যদি বলি, আপনারা নির্বাচনের কথা না বলে ক্ষমতায় থাকার জন্য পাগল হয়ে গেছেন। সুতরাং কোনো রকম ছলচাতুরি করবেন না।”
বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, “সংবিধান সংশোধন করার আপনারা কে? পার্লামেন্ট ছাড়াই সংবিধান সংশোধন করে ফেলবেন? মনে রাখতে হবে, সংবিধান কোনো রাফ খাতা নয় যে, যা খুশি তাই করবেন। সংবিধান সংশোধন কিংবা পুনর্লিখন করতে হলে, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছেন, যারা স্টেকহোল্ডার রয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তা করতে হবে।”
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে জোরেসোরে এই দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা বলা হচ্ছে। এটা কীসের দ্বিতীয় স্বাধীনতা? এই কথাটার আবিষ্কার করল কে? কোন গোষ্ঠী আবিষ্কার করল। কেন করল? আমরা স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছি, ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়েছি। এখন দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে কী বোঝাতে চান আপনারা? আমার কাছে এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, আপনারা কি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করতে চান? মনে রাখতে হবে, বাবার আগে ছেলে হাঁটলে সেই দেশ-জাতি শেষ হয়ে যায়।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “তিন মাস হলো অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আমাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়নি। অথচ আপনারা একটা অর্ডিন্যান্স জারি করে ২০০৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যন্ত বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। কিন্তু সেটা করছেন না। হয়তো করবেন, অথবা করবেন না।”
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, “আগে আমরা কারাগারেই থাকতাম, মাঝেমধ্যে কারাগার থেকে বের হতাম। কারাগার ছিল আমাদের আবাসিক ঠিকানা। কারণ, গত ১৬ বছরে আমাদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে। সরকারকে বলব, আমাদের ও জনগণকে শান্তি দিন, স্বস্তি দিন। অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।”