• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও চায় না মানুষ


বিজন কুমার
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৩, ০৯:৩৮ পিএম
হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও চায় না মানুষ
গ্রাফ-সংবাদ প্রকাশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। অবরোধ-হরতাল, পাল্টাপাল্টি সমাবেশসহ রাজনৈতিক দলগুলোর একের পর এক কর্মসূচিতে দেশবাসীর মনে দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা। সমাবেশ, অবরোধ ও হরতালের নামে জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতির। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জমে যাচ্ছে কাজ। থমকে যাচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন।

কী হতে যাচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে? তা নিয়েও সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা হয় সংবাদ প্রকাশের।

শিক্ষার্থীরা যা বলছেন
করোনাকালীন সময় কাটিয়ে নতুন উদ্যমে জেগে উঠতে শুরু করেছে দেশের শিক্ষাখাত। তবে চলমান কর্মসূচিকে ঘিরে শিক্ষার্থীরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তুহিন নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বলেন, “করোনাকালীন ক্লাস পুরোপুরি বন্ধ ছিল। অনলাইন ক্লাস আর সরাসরি ক্লাসের মধ্যে অনেক ফারাক। সরাসরি ক্লাসে শেখা যায় বেশি। বর্তমানে দেশের রাজনীতি ঘিরে যেসব সমাবেশ, হরতাল, অবরোধ হচ্ছে- তাতে আমাদের অভিভাবকরা বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। আবার যদি করোনার মতো অনলাইন ক্লাস শুরু হয়, তাহলে শিক্ষা খাতের অবনতি হওয়া স্বাভাবিক।”

শেখর নামের এক ছাত্র বলেন, “ক্লাসে যেতে না পারলে ভালো লাগবে না। বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে পড়লে মানসিকতা যেমন ঠিক থাকে, তেমন পড়ায় মনোযোগীও হওয়া যায়। কিন্তু অবরোধ, হরতাল, মারামারি হলে কীভাবে যাব?”

 যা বলছেন সাধারণ মানুষ
গত কয়েকদিনের অবরোধ কর্মসূচিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ঠিকমতো অফিস করতে না পারায় কাজের চাপ বেড়েছে। কথা হয় ‘বিডিকম’ নামের এক প্রতিষ্ঠানের একাউন্টস ম্যানেজার মো. জুবায়েরের সঙ্গে। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “অবরোধে সবার মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। সকালে অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হচ্ছি, সুস্থ মতো ফিরতে পারব কি না, আতঙ্কে থাকি। পরিবারের সদস্যরাও দুঃশ্চিন্তায় থাকেন। তারপরও জীবিকার তাগিদে চাকরি বাঁচাতে বের হতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় আসলে সবারই মঙ্গল।”

ফিরোজ আলম নামের এক ব্যক্তি বলেন, “বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। অবরোধের কারণে নিত্যপণ্যের জোগান কম হওয়ায় দাম বেড়ে যায়। আমরা তো দিন আনি, দিন খাই। পেটনীতিতে বিশ্বাসী আমরা। কিন্তু সামনের দিনগুলো কীভাবে যাবে? বেতন বাড়ে না, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, “অবরোধ, হরতালে আতঙ্ক ছড়াবে স্বাভাবিক। এখন যে দলই এসব কর্মসূচি ঘোষণা করুক না কেন। এতে শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, পড়ালেখার ক্ষতি হয়।”

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে কথা হয় ফুটপাতের দোকানদারদের সঙ্গে। সবাই বলছেন, সমাবেশ, অবরোধ, হরতাল কর্মসূচির দিনগুলোতে বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসে। তাদের ভাষ্য সঠিক সিদ্ধান্তই পারে দেশের পরিস্থিতি শান্ত করতে।

রাশেদ নামের এক মধু ও বাদাম বিক্রেতা বলেন, “ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনাগুলো সব থেকে বেশি আতঙ্কের। বাসে আগুন লাগলে দেখা যায়, মানুষ একটা স্থান থেকে বেড়িয়ে যায়। কিন্তু ধাওয়া-পাল্টা হলে দোকান কোই নিয়ে যাবো কূল-কিনারা পাই না। আমরা ঝামেলা চাই না। আমরা শান্তি চাই।”

আমির হোসেন নামের এক কিচেন সামগ্রী বিক্রেতা বলেন, “কারওয়ান বাজারের পাশে দেখে একটু বিক্রি হয়েছে। তা না হলে হতো না। সব দলগুলো একটা সমঝোতায় বসুক। এটাই ভালো হবে।”

বাসচালক ও যাত্রীরা যা বললেন 
গত কয়েকদিন আগের টানা অবরোধে দেখা যায়, রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু দূরপাল্লার যাত্রীসেবা ছিল বন্ধ।

অবরোধের দিনগুলো কেমন কেটেছে জানতে চেয়ে কথা হয় ফরহাদ নামের এক বাসচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমরা অবরোধ চাই না। অবরোধ না মেনেই বাস চালাতে হয়েছে। কারণ পেট খায়। হরতালে একদিন গাড়ি বের করছি। চার’শ টাকা ভাড়া মারছি। আবার অবরোধ দিয়েছে। কীভাবে চলব জানি না। আতঙ্ক তো আছেই।”

সোহান নামের এক যাত্রী বলেন, “অবরোধের দিনগুলোতে বাস পাওয়া যায় কম। হেঁটে যেতে হয়। এটা দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছু না।”

রাজনীতিকদের কথা 
কথা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “ অবরোধ পুরো জাতি সমর্থন করছে না। এটা হুমকি ছাড়া কিছু নয়। তারা অবরোধ ডেকে গাড়ি জ্বালায়। এসব করে নির্বাচন বাতিল করতে চায়। তাদের কীভাবে দমন করতে হয় তা আমরা জানি। সমঝোতার দরজা খোলা ছিল, তারা আসেনি। সরকার টেনে-হেঁচড়ে নামাতে চায় তারা। আলোচনার পথ তারাই বন্ধ করেছে।”

কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান খন্দকার বলেন, “চলমান আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়। এ আন্দোলন সাধারণ মানুষের আন্দোলন। তাছাড়া প্রতিটি দলের সমর্থন রয়েছে আন্দোলনে। দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া। কথা বলার অধিকার নেই। তারা গণতন্ত্রের গল্প শুনিয়ে যাচ্ছে। উসকানি দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আওয়ামী লীগের লোকজন নাস্তা নিয়ে গাড়ির চালকদের দরজায় ঘুরছে, তবু গাড়ি বের হচ্ছে না। তাদের সমঝোতা করার মানসিকতা দেখছি না। ”
 

Link copied!