কোনো বন বা জঙ্গল নয়, নদ-নদীর চরাঞ্চল বা ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠও নয়। একেবারে চোখ ধাঁধানো তিলোত্তমা নগরী ঢাকা। তখন সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই। চারদিকে আলোর রোশনাই। ছুটে চলছে হাজার হাজার যানবাহন। সড়কে মানুষের মিছিল।
ঠিক এমনি এক তুমুল ব্যস্ত মুহূর্তে হঠাৎই চলে যায় বিদ্যুৎ। আর এই ফাঁকে ভয়ঙ্কর চেহারার উন্মত্ত এক মহিষ ছুটে আসে মগবাজারের আমতলার কলোনিতে। শুরু করে তাণ্ডব। হামলে পড়ে এক নারীর ঘরে। শিংয়ে গুঁতায় মেরে ফেলে নারীটিকে।
এরপর আশেপাশে যাকে সামনে পায় তাকেই তেড়ে গিয়ে আঘাত করে। এমন দৃশ্যে সবাই হতভম্ভ হয়ে পড়েন। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াদৌড়ি ছুটাছুটি শুরু করে। গোটা কলোনিতে ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যেই ক্ষতবিক্ষত হয় অন্তত ১০ জনকে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পাগলা মহিষের এই তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেছে মগবাজারের আমবাগান এলাকার চল্লিশঘর নামক স্থানে।
নিহতের নাম সাথী (৩৫)। তিনি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সাইদুল ইসলামের স্ত্রী। তারা আমবাগান এলাকায় ভাড়া থাকতেন। আহতদের মধ্যে রনি (৩০), তার স্ত্রী নাদিয়া (২৪) ও শামছুকে (৪৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে।
আহত নাদিয়ার ভাই নাহিদ জানান, সন্ধ্যার দিকে চল্লিশঘরে আচমকা এক মহিষ ছুটে আসে। এসেই এলাকায় যাকে সামনে পায়, তাকে শিং দিয়ে আঘাত করে। ঘটনার সময়ে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। তাই কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেকে আহত হন।
নাহিদ আরও জানান, আহতদের শামছু মিয়ার পেটের নাড়ি বের হয়ে যায়। তার অবস্থা আশঙ্কজনক। আর মহিষের তাড়া থেকে দুই সন্তানকে রক্ষা করতে গিয়ে মহিষের শিংয়ের আঘাতে গুরুতর আহন হন নাদিয়া। তার ডান পা ভেঙে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, মগবাজারের পাগলা মাজার এলাকা থেকে মহিষটি ছুটে এসেছিল। সে সময় বিদ্যুৎ ছিল না। মহিষটি আমবাগানের ওই বাড়িতে ঢুকে বেশ কয়েকজনকে আক্রমণ ও আহত করে।
হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক রূপন চৌধুরী বলেছেন, সন্ধ্যায় নিহত নারী চল্লিশগ্রামে নিজ বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। সে সময় হঠাৎ পাগলাটে এক মহিষ কলোনিতে ঢুকে পড়ে মানুষজনকে তাড়া করে।
রূপন চৌধুরী আরও জানান, স্থানীয় মাংস ব্যবসায়ী জবাইয়ের উদ্দেশে মহিষটিকে গাবতলী হাট থেকে কিনে এনেছিলেন। পাগলা মাজারের কাছেই বেঁধে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে দড়ি ছিঁড়ে পালিয়ে মহিষটি উন্মত্তের মতো ছুটতে থাকে আর মানুষজনকে তাড়া করে। কলোনিতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ছুটে পালিয়ে গিয়েছিল মহিষটি। পরে রামপুরা থেকে আটক করা হয়েছে।