‘‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র। নানানভাবে নতুন জিনিস, শিখছি দিবারাত্র।’’—সুনির্মল বসুর এই মন্ত্র মেনে চলা শুরু করেছে খিলগাঁওয়ের পল্লীমা সংসদ। প্রকৃতি থেকে কীভাবে শিক্ষা নিতে হয়, শিক্ষার্থীদের সে বিষয়ে উৎসাহ দিতে সংগঠনটি আয়োজন করে শিক্ষাসফরের।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ১০০ দিবসের একটি কর্মপরিকল্পনায় সাড়া দিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ সংস্থার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ শিক্ষাসফরের আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো শহীদ বাবুল একাডেমি ও পল্লীমা বিদ্যাপীঠ।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জাতীয় চিডিয়াখানায় এ শিক্ষাসফরে যোগ দিয়েছেন তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরাও।
এছাড়া, ৪৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত পল্লীমা সংসদের আরও তিনটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যানিকেতন, পল্লীমা গ্রিন, মার্শাল আর্টের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কর্মকর্তারাও এ শিক্ষাসফরে অংশ নিয়েছেন।
এদিন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানল পরম উপকারী বন্ধু সম্পর্কে। আগ্রহ আর বিস্ময়ের দৃষ্টিতে চেষ্টা করছে তাদের কৌতূহলকে নিবৃত করতে। এক একটি গাছকে জানছে যেন এক একটি রহস্যভেদ করছে। আশপাশে এত এত বন্ধু, অথচ তারা জানতই না কতটা পরম উপকারী এই বন্ধুরা।
‘পরিবেশ সচেতনতা ও প্রাণ-প্রকৃতির সান্নিধ্যে’—স্লোগানকে সামনে রেখে মানুষের প্রিয় বন্ধু গাছ, বিভিন্ন প্রাণীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানোর লক্ষ্যে ভিন্নরকম এক শিক্ষাসফর। দিনব্যাপী এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের অভিভাবকদের মধ্যে বেশ ইতিবাচক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
গাছ কাটা, প্লাস্টিকের ষথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে যেভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তাতে ছেদ টানতে প্রকৃতিকে ভালবাসা জরুরি, বলছেন স্কুলশিক্ষকেরা। সেই ভাবনা থেকে এ শিক্ষাসফর, বলছেন তারা।
শিক্ষাসফরে উদ্বোধন করেন পল্লীমা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান ময়না। তিনি বলেন, এমন নান্দনিক পরিবেশে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতি থেকে কিছু শিখতে পারবে। প্রাকৃতিক পরিবেশে থেকে তারা শিখবে। শিক্ষার্থীদের জলবায়ু পরিবর্তনে সচেততনতার যে মিশনে নেমেছে সরকার; এই শিক্ষাসফর তার সহায়ক হবে।
কথা হচ্ছিল পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ মনসুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাছের সঙ্গে পরিচয়, প্রাণীর সঙ্গে পরিচয়; একই সঙ্গে প্লাস্টিক দূষণ, পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জানানোর জন্য এ শিক্ষাসফরের আয়োজন করা হয়েছে। আশাকরি এতে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু জানতে পারবে।
জানতে চাইলে শহীদ বাবুল একাডেমির পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থী শাহ আবদুল করিম আকন্দ জানায়, এ শিক্ষাসফরে এসে তার ভালো লাগছে। অনেক অনেক গাছের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। এসব গাছ সে আগে দেখেনি।
শাহ আরও জানায়, গাছ, প্রাণী, প্রকৃতি কিভাবে পরিবেশকে রক্ষা করতে পারে এ শিক্ষাসফরে সে জানতে পেরেছে। ভবিষ্যতে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ করবে না বলে সে জানায়।
ওই একাডেমির অধ্যক্ষ মীরা রায় বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক গড়ে তুলতে এরকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কীভাবে প্রকৃতি ও তাদের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।’’