মাথার ওপরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর নিচে প্রশস্ত রাস্তা। দুই পথেই যাতায়াত করছে রাজধানীবাসী। এরই মধ্যে আবার আশীর্বাদ বর্ষণ করছে মেট্রোরেল। কিন্তু সবকিছুর পরেও স্বস্তি ফিরছে না নগরবাসীর। কারণ দেশের অন্যতম এই ব্যস্ত শহরের মানুষদের সকাল হয় যানজটকে সঙ্গী করেই।
ধানমন্ডি থেকে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছেন রিয়াদ ইসলাম। যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে সংসদ ভবন থেকে হেঁটে বিজয় সরণি পর্যন্ত এসেছেন তিনি। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “রাজধানীর সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন যানজট। এই সমস্যার জন্য দ্রুত অফিসে যাওয়া যায় না। রাস্তায় বের হলেই যানজটে পড়তে হয়। অনেকক্ষণ রাস্তায় আটকে ছিলাম। গাড়ির আশায় থাকলে আরও দেরি হবে। তাই এতদূর হেঁটে এসেছি।”
রাজধানীর যানজট সমস্যায় এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা শুধু রিয়াদের নয়। তার মতো অনেকেরই রয়েছে। যানজট সমস্যায় নাকাল এসব নগরবাসীর অভিযোগ, যানজট সমস্যা নিরসনে প্রথমেই গুরুত্ব দেওয়া জরুরি ছিল সড়কে। অনেকেই আবার বলছেন, ব্যক্তিগতভাবে সচেতনতার কথা।
সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর ফার্মগেট, বিজয় সরণি, খামাড়বাড়ি, আগারগাঁও, তেঁজগাওসহ বিভিন্ন এলাকায় গেলে দেখা মিলবে যানজটে স্থবিরতার চিত্র। যা হজম করেই চলাচল করছে রিয়াদের মতো সহস্রাধিক চাকুরিজীবী। এছাড়াও এই সমস্যায় বিপাকে পড়েন পেশাদার বাসচালক ও শিক্ষার্থীরাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থাই যানজট নিরসনের একমাত্রা সমাধান।
বাসের সিটে বসে থাকা জলিল উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সংসদ ভবন থেকে হেঁটে এসে ২০ মিনিট ধরে বাসেই বসে আছি। সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো না। প্রতিদিনই এমন হয়। আমি মনে করি, যানজট নিরসনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা মেট্রোরেল না করে সড়কে গুরুত্ব দেওয়ার দরকার ছিল।”
তেঁজগাও কলেজের শিক্ষার্থী কেয়া বলেন, “সকালে যখন কলেজের একটি ক্লাস ধরতে পারি না। শুধু জ্যামের (যানজট) কারণে। তাছাড়া যানজটের কারণে ক্লাসে গিয়ে এনার্জি (পড়া লেখার মানসিকতা) হারিয়ে ফেলি। আমাদের জন্য যদি একটি পথ আলাদা করে দেয়। তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।”
বাস চালক রহমান বলেন, “সকাল থেকেই জ্যামে পড়তে হয়। এতে দেখা যায় যাত্রী নেমে পড়ছে ভাড়া না দিয়েই। তেল ঠিকই পুড়ছে। কিন্তু পড়ে দেখা যায় টাকা উঠে না। এই সমস্যা কি কারণে হচ্ছে জানি না।”
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মেট্রোরেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। চালু হলে তখন আমরা এই বিষয়ে বলতে পারবো। তবে ঢাকার যানজট নিরসনে এর আগে ৬টি ফ্লাইওভার করা হয়েছে। কিন্তু ফ্লাইওভার দিয়ে যানজট নিরসন হয় এটা কোনো কিতাবে (বই) লেখা নেই। এতে বরং নিচের যানজট ফ্লাইওভার পর্যন্ত চলে গেছে। আমি মনে করি, যারা এই কাজটি (ফ্লাইওভার নির্মাণ পরিকল্পনা) করেছেন তারা বিনিয়োগ এবং উন্নয়নের জন্য করেছেন। পরিকল্পনা কমিশনে যদি কিছু পরিকল্পনাবিদ থাকতো। তাহলে এই সমস্যা সমাধান হতো।”
তিনি আরও বলেন, “কোনো সমস্যা সমাধানের পূর্বে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। সমস্যার উৎপত্তিস্থল কোথায়। এই সমস্যা (যানজট) আসছে গণপরিহন ব্যবস্থা থেকে। গণপরিবহনগুলো প্রতিটি যাত্রীকে তার ইনকাম (আয়) ভাবে। ফলে তারা যাত্রী ছিনতাইয়ের চেষ্টায় প্রতিযোগিতা করে। পিছনের যানবাহনকে এগিয়ে যেতে দেয় না। ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।”
গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ বলেন, “এক করিডরে একটি মাত্র কোম্পানি থাকতে হবে এবং তাকে নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। তাহলে প্রতিযোগিতা হবে না। গণপরিবহন ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল হলে যানজট নিরসনের সমাধান আসবে। এতে কোনো খরচ লাগবে না।”