ভোজ্য তেলের মান নিশ্চিত করতে বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করে পণ্যের মান নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় মঙ্গলবার (১ আগস্ট) থেকে। ফলে বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়।
এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। মূল্যস্ফীতির এই বাজারে আবারও খরচ বাড়ল তাদের। সাধারণত নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী খোলা সয়াবিন তেল কিনতে পারতেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল কিনতে হলে ন্যূনতম হাফ লিটার তেল কিনতে হয়। পাশাপাশি প্যাকেটজাত সয়াবিন তেলের দাম খোলা সয়াবিন তেলের চেয়ে বেশি।
সরকার-নির্ধারিত প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৯ টাকা। অন্যদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৯ টাকা লিটার।
এদিকে বিএসটিআই বলছে, খোলা ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সঠিক মাত্রায় থাকে না। ভোজ্যতেলের মান নিশ্চিত করতেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সমিতি বাজারে বাজার করতে আসা রহমান মিয়া বলেন, “আয় কম, সে জন্য ব্যয় কম। এতদিন খোলা তেল নিয়া খাইতাম। এখন যদি বোতলের তেল নিতে হয় তা হলে খরচ বাড়বে।”
রিকশাচালক সাদ্দাম বলেন, “সারাদিন কাম করে বাড়ি যাওয়ার সময় ৩০ টাকার তেল নিয়া যাইতাম। হেইডা দিয়াই দুই দিন বা তিন দিন চালাইতো। এখন তো আধা লিটারের কমে বোতল নাই। তারও দাম বেশি। অহন এই টেহা কই পামু? সারাদিন রিকশা চালাই, তাও দামের সঙ্গে কুলাইয়া উঠতে পারি না।”
দেশে ভোজ্যতেলের প্রায় ৫০ শতাংশই খোলা হিসেবে বিক্রি হয়। দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ সাধারণত ৫০ বা ১০০ গ্রাম বা এর কিছু কম বেশি পরিমাণ ভোজ্যতেল কিনে থাকেন। গ্রামের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ খোলা তেল কেনেন। ফলে এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী বলছেন খুচরা ও পাইকারি তেল বিক্রেতারা।
রাজধানী নাখালপাড়ার এক বিক্রেতা বলেন, “আমার তো সব খোলা তেলের ক্রেতা। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ১০ বা ২০ টাকার তেল নেন। খোলা তেল বিক্রি বন্ধ হওয়াতে আমাদের কিছুটা ক্ষতি। কারণ ক্রেতা কমে যাবে।”
একই কথা বলছেন কারওয়ান বাজারের পাইকারি খোলা তেল বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন,“যারা দৈনিক বাজার করে, বিশেষ গরীব মানুষ, তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত ক্ষতিকর। তাদের জন্য বোতলজাত তেল বেশি দামে কেনা তো কষ্টের হয়ে যাবে।”
এর আগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান জানিয়েছিলেন, বিক্রির সময় ওজনে কম দেওয়া, ভেজাল বন্ধ এবং পুষ্টির মান বজায় রাখার লক্ষ্যে ১ আগস্ট থেকে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে না।
এ এইচ এম শফিকুজ্জামান আরও জানান, প্রাথমিকভাবে সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও একই নিষেধাজ্ঞা আসবে।