রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান থেকে মো. সিদ্দিক (৩) নামের এক শিশুকে অপহরণের পর অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে কেনা-বেচার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
শুক্রবার (১৯ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তাররা হলেন—অপহরণকারী পীযূষ কান্তি পাল (২৯), সহযোগী ও স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল (২৫), শিশু বিক্রির মধ্যস্থতাকারী সুজন সুতার (৩২), শিশু ক্রেতা পল্লব কান্তি বিশ্বাস (৫২) ও তার স্ত্রী বেবি সরকার (৪৬)।
র্যাব জানায়, গত ২৬ এপ্রিল দুপুরে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় বাসার সামনে বড় বোন হুমায়রার (৮) সঙ্গে খেলছিল অপহৃত শিশু মো. সিদ্দিকসহ (৩) আরও ৭-৮ শিশু-কিশোর।
এ সময় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি সবাইকে চকলেট খাইয়ে সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে সিদ্দিককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। দিন শেষে তাদের মা বাসায় আসলে হুমায়রা বিষয়টি মাকে জানায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
পরবর্তীতে অপহৃত শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। সাধারণ ডায়েরি হওয়ার পর থেকে সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ।
পরে শিশুটির বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত শুরু করে র্যাব-২। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে যে অপহরণকারী ব্যক্তি সাভারের বাসিন্দা পীযূষ কান্তি পাল ও তার সহযোগী স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল। এই দম্পতি শিশুটিকে বিক্রির উদ্দেশ্য একটি অনলাইন গ্রুপে পোস্ট দেয়। এরপর তারা সুজন সুতার মাধ্যমে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে বিক্রি করে দেয়।
শিশু কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত সুজন সুতারকে ঢাকার শাহবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৮ মে) অপহৃত শিশুকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াসি গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়।
ডিআইজি আনোয়ার হোসেন জানান, অপহরণকারী চক্রটির মূল হোতা পীযূষ কান্তি পাল পঞ্চগড় জেলার সদর থানার রমেন্দ্র চন্দ্র পালের ছেলে। সে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এমবিএ পড়াকালীন সময় পার্ট টাইম জব হিসেবে বিউটি পারলার/স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। পীযূষ কান্তি পাল স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় রিদ্ধিতা পালের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তারা ২০২০ সালে বিয়ে করেন। মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় থেকে সে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০২২ সালের মে মাসে মানব পাচারের অভিযোগে বনানী থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। এই মামলায় কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বের হয়।
যেভাবে শিশুটি বিক্রি হয় :
সাভার থেকে ঢাকা উদ্যান এলাকায় এসে শিশু সিদ্দিককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর অপহরণের পর নিজেদের সন্তানের ছবি ব্যবহার করে একটি অনলাইন গ্রুপে পোস্ট দেয়। রিদ্ধিতা পাল লেখেন, স্বামী পরিত্যক্ত কাজের মহিলার একটি বাচ্চাকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে দত্তক দেওয়া হবে। এরপর সুজন সুতার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত ২১ এপ্রিল যোগাযোগ করে। এই সময়ে রিদ্ধিতা পাল নিজের ছেলের ছবি সুজন সুতার কাছে পাঠিয়ে বলে ‘এই ছেলেকে দত্তক দেওয়া হবে, আপনাদের পছন্দ হয় কি না বলেন’। ছবি দেখে সুজন সুতার শিশুটিকে পছন্দ করে এবং তাকে টাকার বিনিময়ে দত্তক নেবে বলে জানায়। পরবর্তীতে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় রিদ্ধিতা পাল নিজেকে অর্পনা দাস ও আসামি পীযূষ কান্তি পাল নিজেকে বিজন বিহারী পাল পরিচয় দিয়ে তার বাসার কাজের মহিলার শিশু হিসেবে অপহৃত সিদ্দিককে একটি স্ট্যাম্প তৈরি করে হাত বদল করে। এ সময় প্রমাণ স্বরূপ টিকা কার্ড, জন্ম সনদ এবং আইডি কার্ডের ফটোকপি দেওয়া হয়।
অপহৃত শিশু বিক্রিতে সহায়তাকারী সুজন সুতার র্যাবকে জানিয়েছে, তার নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও স্ত্রীর বড় বোন বেবি সরকারের একটি সন্তান প্রয়োজন হওয়ায় পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালের কাছ থেকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে মো. সিদ্দিককে কিনে নেয়। এরপর গত ২৬ এপ্রিল রাতে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও বেবি সরকারকে নিজ বাড়ি গোপালগঞ্জে গিয়ে দিয়ে আসে।
