তেলের তেলেসমাতি কাটছে না। মাসখানেক ধরে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই বললেই চলে। ক্রেতারা বাধ্য হচ্ছেন সয়াবিনের বিকল্প খুঁজতে। এতে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ডিলাররা বলছেন, মিলমালিকরা দাম বাড়াতে চায় বলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন।
বাজারে সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া মানে সোনার হরিণ খুঁজে পাওয়া। ৫ লিটারের বোতল উধাও। দু-একটি দোকানে ২ লিটারের বোতল পাওয়া যায়, তবে সঙ্গে থাকে শর্ত। ২ লিটারের সঙ্গে নিতে হবে ১ কেজির পোলাওয়ের চাল।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সয়াবিন তেলের সংকটের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে দেশের দুই শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী।
গত ১০ ডিসেম্বর ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর পর কয়েক দিন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পর ফের বাজারে বোতলজাত ভোজ্যতেলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে।
ডিলাররা বলছেন, সব প্রতিষ্ঠান সয়াবিন তেল সরবরাহ না করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। কয়েকটি ডিলারের দোকান বন্ধও দেখা যায় কারওয়ান বাজারে। ভোক্তারা বলছেন সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে রমজানে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।
এ মুহূর্তে বাজারে সয়াবিনের তেলের যে সংকট, সেটা কৃত্রিম। নগরীর হাতিরপুল, নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল খুব কম সংখ্যক দোকানেই সীমিত আকারে পাওয়া গেলেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্যানোলা তেল ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে। সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের দাম যেখানে ৮৫০ টাকা, সেখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্যানোলা তেল ৯৪০ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলো ক্যানোলার নামে বেশি দামে সয়াবিন তেল বাজারজাত করে অধিক মুনাফা করছে।
অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ এবং ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে খোলা ভোজ্যতেলে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। আর অনেক নকল বোতলও পাওয়া যাচ্ছে।
শুধু ভোজ্যতেলেই কারসাজি করে বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র। এমনটিই দাবি করেছেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, রমজানকে সামনে রেখে বাজারে সিন্ডিকেট সক্রিয় হলেও সরকারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। বরং বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য ও ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভূমিকারও সমালোচনা করেন।
সাধারণ ক্রেতারা চান তেলের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সরকার তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক করুক।