• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ময়লা-বাণিজ্য নিয়ে এখন তারা মুখোমুখি


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৪, ০৪:৫৮ পিএম
ময়লা-বাণিজ্য নিয়ে এখন তারা মুখোমুখি

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বদলেছে অনেক কিছুই। যা ছিল একসময় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণে, সেই সব এখন হাতবদল হয়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএনপির নেতারা। তারই ধারাবাহিকতা যেন ফুটে উঠল ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন ২০ নম্বর ওয়ার্ডে (মহাখালী–নিকেতন) ময়লা–বাণিজ্যে (বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ)। এ সময় এ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নাছির। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ওয়ার্ডটিকে বিভিন্ন এলাকায় ভাগ করে কাজটি নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিয়েছেন বিএনপির নেতারা।

এদিকে এর মধ্যে বিদেশের একটি নম্বর থেকে কল করে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশের পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ময়লা সংগ্রহের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। এরপর পরিচ্ছন্নতা ও ভ্যান সার্ভিসের কর্মীরা কাজে গেলে কয়েক দফা হামলা হয় তাদের ওপর। এতে ২১ থেকে ২৪ অক্টোবর, টানা চার দিন বর্জ্য সংগ্রহ বন্ধ ছিল। হয়নি রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া ও নালা পরিষ্কারের কাজও।

মহাখালীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভ্যান সার্ভিস কর্মীরা কিছু এলাকায় বর্জ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। তবে দুপুর পর্যন্ত কিছু এলাকায় ময়লা সংগ্রহ করতে যাননি তারা। ওয়ার্ডে (২০ নম্বর) নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও কাজ করছেন ভয়-আতঙ্ক নিয়ে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া ও নালা পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত ছিল বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাল্টি ইন্টারন্যাশনাল। এর স্বত্বাধিকারী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য ফরিদ উদ্দিন। আর বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করতেন কাউন্সিলর মো. নাছিরের নিয়োজিত ভ্যানমালিকেরা। এ কাজের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের তত্ত্বাবধায়ক লাবু মিয়া।

৫ আগস্টের পর কাউন্সিলর নাছির আত্মগোপনে চলে যান। তখন বর্জ্য সংগ্রহের কাজের নিয়ন্ত্রণ নেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এখন মহাখালী দক্ষিণপাড়া (ক-ব্লক) ও সাততলা বস্তি এলাকার বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ বাবদ বিল নেন ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান আক্তার; টিবি গেট ও বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এলাকায় (চ ও ছ-ব্লক) নেন বনানী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক চান সরদার; তিতুমীর কলেজের দক্ষিণ পাশের এলাকায় (গ-ব্লক) বনানী থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম ও ওয়্যারলেস এলাকায় (জ-ব্লক) ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অলি উল্লাহ মিয়া।

তবে ওই কাজের তদারকির দায়িত্বে আছেন মাল্টি ইন্টারন্যাশনালের তত্ত্বাবধায়ক লাবু মিয়া। অবশ্য বিল আদায় করছেন বিএনপি নেতাদের নিয়োজিত কর্মীরা।

মাল্টি ইন্টারন্যাশনালের কর্মীরা জানান, ১৮ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে চ-ব্লক এলাকায় নালা পরিষ্কার করার সময় আট-দশজন এসে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মারধর করেন ও কাজ বন্ধ করতে বলেন।

২২ অক্টোবর ভোরে মহাখালী স্কুল সড়কের দাদা হোটেল এলাকায় রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী মজনু ও শওকত আলী। হঠাৎ দুটো পিকআপে ১৫-২০ জন জিআই পাইপ, লাঠি, রড, দা হাতে আসেন। এ সময় মজনুর ডান হাতে একটি কোপ দেওয়া হয়। আর শওকতের মাথায় আঘাত করা হয় লাঠি-রড দিয়ে।

এ বিষয়ে মাল্টি ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, “গত মাসের শুরু থেকেই দুটি অচেনা নম্বর থেকে কল করে সন্ত্রাসী বিকাশের পরিচয় দেওয়া হচ্ছে। কাজ বন্ধ রেখে তাদের সঙ্গে বসতে বলে। তাদের সঙ্গে না বসে কাজ করায় হামলা চালানো হয়েছে।”

এ বিষয়ে বনানী থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “অজ্ঞাত ওই দুটি নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে তাতে আমার ছবি ব্যবহার করে আমার নামে কল দিয়ে বিভিন্নজনকে হুমকি দিয়ে চাঁদা চাওয়া হয়েছে। না দিলে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান বলেন, “দুই দফায় হামলা হওয়ার ঘটনা জানা গেছে। এতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ভ্যান সার্ভিসের কাজের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী যুক্ত থাকায় এমন হয়েছে বলে জেনেছি। ওই কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

সূত্র : প্রথম আলো

Link copied!